সুদূর গাইবান্ধা থেকে রাজধানীর উপকণ্ঠে তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার মাঠে এসে পৌঁছান এহসানুল বারি রিজভী। উঠেছেন ইজতেমা ময়দানের জেলার জন্য নির্দিষ্ট ৩৩ নম্বর খিত্তায়। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আসার পর সন্ধ্যার দিকে তার মোবাইলও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু নিজ বাড়িতে যোগাযোগের তাগিদ থেকে তিনি খুঁজছিলেন মোবাইল চার্জের স্থান। এরপর চলে আসেন মাঠের পাশেই আহসান উল্লাহ জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন অস্থায়ী সব দোকানের সামনে। আর সেখানেই খোঁজ মিলে যায় মোবাইল চার্জ দেওয়ার অস্থায়ী এক দোকানের। যেখানে ২০ টাকায় করা যাচ্ছে মোবাইলের ফুল চার্জ।

সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানের নাম ভাই ভাই টেলিকম। পাশের মার্কেটে তাদের মূল দোকান থাকলেও ইজতেমা উপলক্ষ্যে এখানে মোবাইল চার্জ দেওয়ার অস্থায়ীভাবে একটি দোকান দিয়েছেন। দোকানের বাহিরে দেওয়া বেশ কয়েকটি ব্যানার দেখেই মূলত কাস্টমাররা এখানে আসছেন।

ব্যানারে বড় করে লেখা ''ভাই ভাই টেলিকম, এখানে সকল প্রকার মোবাইল চার্জ করা হয়''।

অস্থায়ী এ দোকানটির স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন জানান, মূলত ইজতেমা উপলক্ষ্যে আগত মুসল্লিদের মোবাইলে চার্জ করে দেওয়ার লক্ষ্যেই এখানে এই দোকান দেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, ভাই ভাই টেলিকম নামে আশেপাশের মার্কেটে আমাদের কয়েকটি দোকান আছে। এখানকার আমাদের এই দোকানটি অস্থায়ী। মূলত মুসল্লিদের কথা ভেবে আমরা মোবাইল চার্জ দেওয়ার এই দোকান বসিয়েছি। এখানে ২০ টাকায় যে কেউ যে কোনো মোবাইল ফুল চার্জ করে নিয়ে যেতে পারবেন।

দোকান বসানোর পদ্ধতি নিয়ে ইমরান হোসেন বলেন, যেই জায়গায় আমরা দোকান বসিয়েছি সেটি ব্যক্তি মালিকানার জায়গা। দুই দফায় ইজতেমার এই কয়েক দিনের জন্য মালিকপক্ষকে মোটা অঙ্কের টাকা ভাড়া দেওয়া লেগেছে। এছাড়া আমরা ১০০ পিস চার্জার এনেছি। এই খরচের সঙ্গে অস্থায়ী ডেকোরেশনের খরচ হয়েছে। এই বিষয়গুলোর সঙ্গে কিছুটা লাভের আশায় আমরা মুসল্লিদের মোবাইল চার্জ করে দিচ্ছি।

তিনি আরও জানান, মোবাইল ফুল চার্জের জন্য আমরা নিচ্ছি ২০ টাকা। যে কেউ আসলে তাদের মোবাইল কাঁচের স্বচ্ছ র‍্যাকের মধ্যে ঢুকিয়ে চার্জ করা হচ্ছে। আর সবাইকে একটি করে টোকেনও দেওয়া হচ্ছে।

এই দোকানে মোবাইল চার্জ করতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, ইজতেমা ময়দানে মোবাইল চার্জ করার জায়গার খুব সঙ্কট। এর মধ্যে এখানে মোবাইল চার্জ দেওয়ার এই বিশেষ দোকানের ফলে মুসল্লিদের খুব উপকার হয়েছে। আমি নিজেও ২০ টাকা দিয়ে চার্জ দিতে দিয়েছি মোবাইল ফোন। তারা বললো সারাদিনে প্রায় ২০০ মোবাইল চার্জ দিয়েছে।

এদিকে ইজতেমায় যোগ দিতে গত দুই দিন ধরেই ইজতেমা মাঠে আসতে শুরু করেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসল্লিরা। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেও মুসল্লিরা যোগ দিয়েছেন এই কাফেলায়। তবে আজ সকাল থেকে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে সবচেয়ে বেশি।

শুধু ইজতেমা ময়দানই নয় বরং এই এলাকার রাস্তাঘাট-অলিগলিতেও ছেঁয়ে গেছে মুসল্লি। সবাই যেন একই পথের পথিক, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে সবাই যেন পাগলপারা। সব বিভেদ ভুলে ইজতেমায় অংশগ্রহণই যেন সবার মূল উদ্দেশ্য।

মূলত করোনার কারণে গত দু'বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবার ৫৭তম তাবলীগের এ মহাসম্মেলনে যোগ দিতে আগেভাগেই উপস্থিত হচ্ছেন মুসল্লিরা। ময়দানে আসা মুসল্লিদের জমিয়ে রাখতে বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয়েছে প্রাথমিক বয়ান। বিশাল মাঠটিকে বাঁশের খুঁটির ওপর চটের ছাউনির প্যান্ডেলে লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। বসানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি।

একদিন আগেই ১৬০ একর জায়গার বিশাল ময়দানে শামিয়ানা টানানো স্থান যেন মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এছাড়া আশেপাশের এলাকাতেও প্রচুর পরিমাণে মুসল্লিদের ঢল দেখা যায়। ঢাকা-গাজীপুরের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক, আশপাশের অলি-গলির মুসল্লিরাও যেন মিশে গেছে ইজতেমা ময়দানে। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই কোথাও।

প্রসঙ্গত, এ বছরও দুই পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্ব সমাপ্তির পর ৫ দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আগামী ২০শে জানুয়ারি শুরু হবে। আগামীকাল প্রথম পর্বে ১৩ থেকে ১৫ই জানুয়ারির ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন মাওলানা জোবায়ের আহমেদের অনুসারীরা। পরবর্তীতে আগামী ২০ জানুয়ারি ফজর থেকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিবেন মাওলানা সাদ আহমাদ কান্ধলভীপন্থি মুসল্লিরা। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।

এএসএস/এমজে