হাতে নাটাই, আকাশে উড়ছে রং-বেরঙের ঘুড়ি। প্রতিটি বাড়ির ছাদ সেজেছে নানান লেজার লাইটের আলোতে। এমন দৃশ্য দেখা গেছে শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন উৎসব সাকরাইনকে ঘিরে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই রং-বেরঙের ঘুড়িতে আকাশ ছেয়ে গেছে।

শীতের উদাস দুপুরের নিভু নিভু সূর্য যখন পশ্চিমের আকাশে হেলে পড়েছে তখন পুরান ঢাকার আকাশে শোভা পাচ্ছে নানান রঙের ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে কাটাকাটি খেলার আনন্দে মেতেছে শিশু-কিশোর থেকে বিভিন্ন বয়সের লোকজন। খেলায় হেরে যাওয়া অভিমানী ঘুড়ি সুতার বাঁধন ছিঁড়ে উড়ে চলে গেছে দূর অজানায়। তা দেখে ব্যথিত হয়েছে ঘুড়িওয়ালা, কিন্তু ব্যথা ছাপিয়ে উল্লাসের ধ্বনিও বেজেছে চারপাশে।

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিন দেখা গেছে, সারাদিন আকাশে নানান রঙের হাজার হাজার ঘুড়ি উড়িয়েছেন পুরান ঢাকাবাসী। পত্মীরাজ, চোখদার, বোয়াপার, গায়েল, নাথপান্দার, নোমাইলদার বলদার, পেটকাদার, মাছরাঙা, টেকা গরুশিং, রগগুড্ডি, প্লাস্টিক মুড়িসহ নানা নামের ঘুড়ি নিয়ে ছোট থেকে বড় সবাই শখের বশে ঘুড়ি উড়িয়েছেন। সাকরাইনকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার আশপাশে অলিগলিতে বিভিন্ন ঘুড়ির দোকান ও মেলা বসেছে। 

পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি আব্দুল রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একসময় আমরা পৌষসংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়াতাম। এখন নাতি নাতনিদের নিয়ে এ ঘুড়ি উৎসব পালন করি। যা আমার কাছে খুবই আনন্দের বিষয়। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে এখন শুধু এ ঘুড়ি উৎসবই টিকে আছে। আশা করি এটা আরও অনেক বছর টিকে থাকবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে।

ঘুড়ি উৎসবে মেতে ওঠা দশ বছর বয়সী ফারদিন আহম্মেদ সাদিদ বলেন, আমার ঘুড়ি ওড়াতে খুবই ভালো লাগে। আমরা সকলে মিলে আজকে সারাদিন ছাদে বসে ঘুড়ি উড়িয়েছি। রাতে আরও আনন্দ করব সবাই মিলে।

জানা যায়, এ ঘুড়ি উৎসবের যাত্রা শুরু হয় ১৭৪০ সালের দিকে মুগল আমলের দিকে। নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি ওড়ানোর দিনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে সাকরাইন একটি উৎসব ও আমেজে পরিণত হয়েছে। দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ উৎসব উদযাপন করেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পুরান ঢাকার সব বাসিন্দারা। 

এমএল/এমএ