‘যে চেনে সে কেনে, সাদেকের সৃষ্টি জামতলার মিষ্টি’— এই স্লোগানে ১৯৫৫ সালে চায়ের দোকানদার মরহুম শেখ সাদেক আলীর হাত ধরে ‘সাদেক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’র পথচলা শুরু। যশোরের বিখ্যাত বাদামি রঙের ছানার তৈরি এই মিষ্টির কদর রয়েছে দেশজুড়ে। বাবার মৃত্যুর পর বর্তমানে তার ছয় ছেলে ব্যবসার হাল ধরেন। অক্ষুণ্ন রাখেন এই মিষ্টির সুনাম। 

জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরে শার্শা উপজেলার জামতলা বাজার থেকে শুরু হওয়া উদ্যোগটির এখন ছয়টি আউটলেট রয়েছে। প্রতিদিন হাজারও মানুষ ছুটে আসেন এই মিষ্টি কেনার উদ্দেশ্যে। দামে সাশ্রয়ী এবং মানে শ্রেষ্ঠ হওয়ায় খুশি ক্রেতারাও।

জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ‘সাদেক গোল্লা’ দীর্ঘ ৬৫ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রেখেছে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখে। দিনে তিন থেকে পাঁচ হাজার মিষ্টি তৈরি হলেও দুপুরের আগেই তা বিক্রি হয়ে যায়

শেখ সোহেল আহমেদ নামের এক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে অনেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সাদেক গোল্লার বিশেষত্ব হলো এতে সুগার বা চিনির পরিমাণ কম। তাই যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা এই মিষ্টি খেতে পারেন, কোনো সমস্যা হয় না।

তৈরি হচ্ছে বিখ্যাত জামতলার মিষ্টি | ছবি- ঢাকা পোস্ট

তিনি আরও বলেন, এটি খেতে অনেক সুস্বাদু এবং নরম। অন্য মিষ্টির চাইতে এর গুণগতমানও আলাদা। তাই মিষ্টি কিনলে এখান থেকেই কিনি।

দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও সাদেক গোল্লার কদর রয়েছে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ‘সাদেক গোল্লা’ দীর্ঘ ৬৫ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রেখেছে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখে। দিনে তিন থেকে পাঁচ হাজার মিষ্টি তৈরি হলেও দুপুরের আগেই তা বিক্রি হয়ে যায়। গরুর খাঁটি দুধ, উন্নত মানের চিনি, হালকা সুজি আর জ্বালানি হিসেবে এক নম্বর কাঠ ব্যবহার করা হয় বলে জানান কারিগররা।

প্রথমেই দুধ জ্বালিয়ে ছানা তৈরি করি। তারপর ছানা চেপে পানি ঝরিয়ে টেবিলের ওপরে কিছুক্ষণ শুকায়। হালকা সুজি মিশিয়ে সেটাকে গোল গোল করে গুছি তৈরি করি। তারপর চিনি দিয়ে শিরা তৈরি করে মিষ্টিগুলো দিয়ে দিই

শাহজালাল, সাদেক গোল্লার কারিগর

জামতলার মিষ্টি তৈরির কারখানায় কথা হয় ২৫ বছর ধরে কাজ করা শাহজালাল নামের কারিগরের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন,  প্রথমেই দুধ জ্বালিয়ে ছানা তৈরি করি। তারপর ছানা চেপে পানি ঝরিয়ে টেবিলের ওপরে কিছুক্ষণ শুকায়। হালকা সুজি মিশিয়ে সেটাকে গোল গোল করে গুছি তৈরি করি। তারপর চিনি দিয়ে শিরা তৈরি করে মিষ্টিগুলো দিয়ে দিই।

তিনি আরও বলেন, এক কেজি ছানায় মিডিয়াম মিষ্টিগুলো ৭০ পিস, বড় সাইজের ৩০ থেকে ৩৫ পিস এবং ছোট সাইজের ১৩০ থেকে ১৪০ পিস মিষ্টি বানাতে পারি।

তৈরি শেষ, এখন বাজারজাতকরণের প্রস্তুতি | ছবি- ঢাকা পোস্ট

সময়ের বদলে ‘সাদেক গোল্লা’ এখন তিন সাইজে চার প্রকার প্যাকেটে সরবরাহ করা হয়। পলিথিনের প্যাকেটে পাঁচ টাকা দামের ২০ পিস, ১০ টাকা দামের ১০ পিস, ২০ টাকা দামের পাঁচ পিস এবং সাদা রঙের ১২ টাকা দামের ১০ পিস করে বিক্রি হয়।

সময়ের বদলে ‘সাদেক গোল্লা’ এখন তিন সাইজে চার প্রকার প্যাকেটে সরবরাহ করা হয়। পলিথিনের প্যাকেটে পাঁচ টাকা দামের ২০ পিস, ১০ টাকা দামের ১০ পিস, ২০ টাকা দামের পাঁচ পিস এবং সাদা রঙের ১২ টাকা দামের ১০ পিস করে বিক্রি হয়

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, এমনকি বিদেশেও যাচ্ছে এ রসগোল্লা। বিয়ে, জন্মদিনসহ বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিবেশন হয় জামতলার এই সাদেক গোল্লা। তবে বাজারে এই নামে অনেকেই মিষ্টি তৈরি করে জামতলার মিষ্টি বলে চালিয়ে দিচ্ছেন— এমন অভিযোগও রয়েছে। সরকারের সাহায্য, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জামতলার এই সাদেক গোল্লা দেশের সব জেলায় বাজারজাত করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খাদ্য হচ্ছে আল্লাহর সেরা দান। এই মিষ্টি একটি সুষম খাদ্য। এর বণ্টনও একটা সেবা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা অনুপ্রাণিত করব যাতে এই শিল্পকে তারা ধরে রাখে। সেইসঙ্গে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সাদেক গোল্লাকে আমাদের জেলা পার করে অন্যান্য জেলায়ও বাজারজাত করা সম্ভব হবে

শাজাহান কবীর, স্বত্বাধিকারী, জামতলার সাদেক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার

যশোরের দড়াটানায় অবস্থিত জামতলার সাদেক মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী শাজাহান কবীর (মরহুম শেখ সাদেক আলীর ছেলে) ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবা ১৯৫৫ সাল থেকে জামতলার বাজারে একটা ছোট্ট দোকান দিয়ে এর যাত্রা শুরু করেন। বাবার মৃত্যুর পর আমরা ছয় ভাই ধাপে-ধাপে ছয়টি আউটলেট নিয়ে যাত্রা শুরু করি। সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ করে আমরা বাজারের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছি।

জামতলা মিষ্টির স্বাদ নিচ্ছেন এক ক্রেতা | ছবি- ঢাকা পোস্ট

পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খাদ্য হচ্ছে আল্লাহর সেরা দান। এই মিষ্টি একটি সুষম খাদ্য।  এর বণ্টনও একটা সেবা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা অনুপ্রাণিত করব যাতে এই শিল্পকে তারা ধরে রাখে। সেইসঙ্গে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সাদেক গোল্লাকে আমাদের জেলা পার করে অন্যান্য জেলায়ও বাজারজাত করা সম্ভব হবে।’

এসআই/এমএআর