শীতের সকালে কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাজধানী ঢাকা। ডাইভারশনের কারণে নির্দিষ্ট স্থানের পর গণপরিবহনও বন্ধ। ভরসা একমাত্র হাঁটা। তাইতো হাঁটা পথেই মাইলের পর পর মাইল। গন্তব্য টঙ্গীর তুরাগ তীর। লাখো মানুষের সঙ্গে সমবেত হয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া।

যত দূর চোখ যায় ততদূর পর্যন্তই শুধু মানুষ আর মানুষের ঢল, হেঁটেই যাচ্ছেন টঙ্গির পথে। গণ কাতারে শরিক হয়ে পরম করুণাময়ের দরবারে হাত পাতা। কোথা থেকে শুরু হয়েছে এই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের লাইন আর কোথায় গিয়ে তা ঠেকেছে তা ভুলে গেছেন খোদাপ্রেমী এসব মানুষেরা।

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে আজ শেষ দিন। দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির আগমনে ইজতেমা মাঠ ও টঙ্গীর আশপাশ মুখরিত হয়ে উঠেছে গত তিন চারদিন ধরেই। আজ (১৫ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ইজতেমার প্রথম পর্ব। সেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে তাইতো ঢল নেমেছে লখো মানুষের।

রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যানবাহনগুলো ডাইভারশনের কারণে বনানী পেরিয়ে হোটেল রেডিসন ব্লুর সামনে এবং প্রগমি সরণি হয়ে আসা গাড়িগুলো কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এর পর থেকেই হাঁটা পথেই এগিয়ে চলেছেন লাখো মানুষ।

রাজধানীর শান্তিনগর থেকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে যাচ্ছেন শহিদুল্লাহসহ তার তিনজন। খিলক্ষেত এলাকায় কথা হয় তাদের সঙ্গে। শহিদুল্লাহ বলেন, কুড়িল পর্যন্ত বাসে আসার পর সেখানে থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ। বাধ্য হয়ে হেঁটেই সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি। আমাদের লক্ষ্য ইজতেমা মাঠ। এখন যতদূর যাওয়া যায়, এরমধ্যে মোনাজার শুরু হলে রাস্তাতেই বসে পড়বো। আমাদের মত হাজার হাজার মানুষ হাঁটা পথেই ইজতেমা ময়দানের দিকে এগিয়ে চলেছে।

একইভাবে কাওলা এলাকায় কথা হয় দুলাল মিয়ার সঙ্গে। তিনিও আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে হাঁটা পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ইজতেমা ময়দানে যাওয়া, এখন হেঁটে যতদূর যাওয়া যায় ততদূর পর্যন্ত যাবো। এরমধ্যে রাস্তাতেই মোনাজাত শুরু হয়ে গেলে সেখানেই বসে পড়ে মোনাজাতে অংশ নেবো। প্রতি বছর এভাবেই রাস্তা বন্ধ থাকে, আর আমরা এভাবেই হাঁটা পথকেই বেছে নিই।

আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ইজতেমার প্রথম পর্ব। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন তাবলিগ জামাতের কাকরাইলের শুরা সদস্য হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধের পর অপেক্ষায় থাকাদের জন্য তুরাগ নদের তীরে এবার ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমায়  ধর্মীয় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ১৬০ একর জায়গার বিশাল ময়দানে সামিয়ানা টানানো স্থানে মুসল্লিতে পরিপূর্ণ। এছাড়া আশেপাশের এলাকাতেও প্রচুর পরিমানে মুসল্লিদের ঢল। ঢাকা-গাজীপুরের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক, আশপাশের অলি গলির মুসল্লিরাও যেন মিশে গেছে ইজতেমা ময়দানে। আশেপাশ মিলেও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই কোথাও। 

দেশের মুসল্লিদের জন্য জেলা ভিত্তিক আলাদা ৯১টি খিত্তা বা ভাগ করা হয়েছে। এবারও দুই পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্ব সমাপ্তির পর ৫ দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আগামী ২০ জানুয়ারি শুরু হবে। তাবলিগ জামাতের বাংলাদেশের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা জোবায়ের আহমেদের অনুসারীরা অংশ নিয়েছেন ইজতেমায়। আজ আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব।

পরের পর্বে মাওলানা সাদ আহমাদ কান্ধলভীপন্থি মাওলানা অনুসারী আগামী ২০ জানুয়ারি ফজর থেকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নেবেন। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার এবারের আয়োজন।

এএসএস/এসএম