চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে প্রথমবারের মতো ভিড়তে যাচ্ছে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের জাহাজ। আগে থেকে বন্দরে ৯ মিটার ড্রাফটের (পানির নিচের অংশ) এবং ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যায়। তবে নানা জরিপ ও প্রক্রিয়া শেষে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ১০ মিটার ড্রাফটের একটি জাহাজকে বার্থিং দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে করে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে অন্যদিকে আমদানি-রপ্তানিতে খরচ কমবে ব্যবসায়ীদের। সবমিলিয়ে গতি আসবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, তিন-চারটি বড় জাহাজ বহির্নোঙরে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার যেকোনো একটি জাহাজকে ভেড়ানো হবে। এ দিন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর চেয়ারম্যান ও বন্দরের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সমীক্ষা করানোর পর আমরা জানতে পেরেছি— বন্দরে বর্তমান অবস্থায় ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এরপর আমরা নিজেরাও সমীক্ষা করে দেখেছি। সবমিলিয়ে বড় জাহাজ বার্থিং দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বহির্নোঙরে কয়েকটি জাহাজ অবস্থান করছে। রোববার (১৫ জানুয়ারি) সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোনটিকে বার্থিং দেওয়া হবে। এ দিন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বড় জাহাজ প্রবেশের বিষয়টি বিভিন্ন শিপিং কোম্পানিকে শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, যুক্তরাজ্যভিত্তিক এইচআর ওয়েলিংফোর্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কর্ণফুলী নদী এবং বন্দর চ্যানেল নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি বন্দরের বর্তমান অবকাঠামো ব্যবহার করে কত দৈর্ঘ্যের এবং ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং দেওয়া যাবে তা সমীক্ষা করে দেখে। এছাড়া বন্দরের অবকাঠামোগত কী পরিবর্তন করলে আরও বড় জাহাজ ভেড়ানো যাবে সেটিও সমীক্ষা করে দেখে।

সমীক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠানটি গত বছর প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং সম্প্রতি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এতে বলা হয়, বন্দরের বর্তমান অবকাঠামো ব্যবহার করে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এছাড়া বহির্নোঙরে ও গুপ্তখালের সন্নিকটের বাঁকে কিছুটা কাজ করলে এবং কয়েকটি পয়েন্টে ড্রেজিং করালে বন্দরে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, যত বড় জাহাজ ভেড়ানো যাবে তত বেশি কনটেইনার এবং মালামাল আনা-নেওয়া যাবে। এতে করে ব্যবসায়ীদের খরচ কমবে এবং সময়ও বাঁচবে।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ইউরোপে সরাসরি পণ্য পরিবহন এবং বড় জাহাজ ভেড়ানো আমাদের আগের দাবি। বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়ছে, এটি অত্যন্ত সুখবর। এটি হলে ট্রানজিট সময় কমে যাবে। বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে অর্ডার বাড়াবে। খরচ কম হবে এবং বাণিজ্যে গতি আসবে। আমরা আমাদের প্রতিযোগী দেশের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে যাব।’

এমআর/এসএসএইচ/