প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটা বাতিল চায় অধিকার বঞ্চিত বেকারসমাজ। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কোটা বাতিল ও শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে দ্রুত সম্পন্ন করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ দাবি করেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মো. তারেক রহমান।

গণস্বাক্ষরে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে এই মুহূর্তে ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পারিবারিক বা পোষ্য কোটা, ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা প্রয়োগ করা হয়েছে, যেখানে ২০ শতাংশ বিজ্ঞান কোটাকে সামগ্রিকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।

সংবিধানে উল্লেখিত কর্মের সমতার অধিকারের বিষয়টি উপেক্ষা করে এবং কোটা বাতিলের পরিপত্র অবজ্ঞা করে এমন কোটা প্রয়োগ করা হয়েছে। যেখানে প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর শ্রেণিকে কোটা বঞ্চিত করে, অগ্রসর শ্রেণিকে কোটা দেওয়া হয়েছে।

একইভাবে রেলওয়েতে ৮৫ শতাংশ কোটা প্রয়োগ করা হচ্ছে, (রেলের স্থায়ী পদে অন্তত ২০ বছর চাকরি করেছেন এমন ব্যক্তির সন্তান) কোটা ৪০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও এতিম ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ২ দশমিক ৫ শতাংশ, আনসার ও ভিডিপি ৫ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা (বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে-মেয়ে বা নাতি-নাতনি) ১৫ শতাংশ, জেলা ৫ শতাংশ ও নারী কোটায় বরাদ্দ থাকছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, বাকি ১৫ শতাংশ নিয়োগ পায় মেধাবীরা। এসব কোটার বিরুদ্ধে আদালতে ২০২১ সালের মার্চ মাসে রিট পিটিশন করলে দীর্ঘ ৯ মাস পর ১৩ ডিসেম্বর প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটা বাতিল করতে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। আদালতের বিড়ম্বনা ও গাফিলতির সুযোগে কোটা বহাল রেখেই ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

মো. তারেক রহমান বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিগত সময়ে আটটি মানববন্ধন করে এর প্রতিবাদ করি। আমরা এই মুহূর্তে পাঁচটি দাবিকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা করছি আমাদের কতটা ন্যায়বিচার বঞ্চিত করা হয়েছে, আমাদের দাবিগুলো কতটা যৌক্তিক।

আরও পড়ুন : প্রাথমিকে কোটায় নিয়োগ পেতে ৮০ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হাইকোর্টে

সংগঠনের দাবিগুলো হচ্ছে—

১. বৈষম্যমূলক এই ফলাফল বাতিল করে এক ও অভিন্ন কাট মার্কে পুনরায় ফলাফল ঘোষণা করা হোক।

ব্যাখ্যা- মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে যাচায় করে দেখেছি, কোটায় নিয়োগ দিতে কাটমার্ক কমিয়ে আনা হয়েছে কোটাধারীদের জন্য। অভিযোগ রয়েছে ৩৫ পেয়ে কোটায় নিয়োগ সম্পন্ন আছে।

অন্যদিকে মেধাবী পুরুষ প্রার্থীরা ৮০ এর মধ্যে ৬০-৬২ পেয়েও নিয়োগ পায়নি। অভিন্ন কাটমার্ক হলে ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা প্রয়োগ করলেও মেধায় আরও বেশি কিছু শিক্ষার্থী নিয়োগ পেত। কোটায় নিয়োগ না পেলে মেধায় নিয়োগ দেওয়া হবে, এই কথাটিও না মেনে তারা কোটায় শতভাগ প্রার্থী পূরণে আলাদা আলাদা পাস মার্ক নির্ধারণ করেছে। কোটাধারীদের পাস করাতে আলাদা আলাদা কাট মার্কে নিয়োগ দেওয়ায় মেধাবীদের নিয়োগকে সংকীর্ণ করা হয়েছে।

২. কোটা বাতিলের সরকারি পরিপত্র মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হোক।

ব্যাখ্যা- যেহেতু সরকারি পরিপত্র জারি করে ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করা হয়েছে। এখানে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদটি ২ শ্রেণিভুক্ত হওয়াতে এখানে কোটা প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। যে বিশেষ বিধান প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অধিদপ্তর করেছে কোটায় নিয়োগ দিতে তা সংবিধান বিরোধী এবং জাতীয় নিয়োগবিধির পরিপন্থি।

তাই প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিধি ২০১৯ এর ধারা ৮ বাতিল করে সরকারি পরিপত্র মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে হবে।

৩. শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে দ্রুত সম্পন্ন করে নতুন কোটামুক্ত পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দ্রুত প্রকাশ করা হোক।

ব্যাখ্যা- সাম্প্রতিক ঘোষণা করা ফলাফলে সাধারণ চাকরিপ্রত্যাশীদের ঠকানোর বিষয়টি সুস্পষ্ট। তাই এখানে মেধাবীদের নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু ব্যাক ডেটে কিছু পরীক্ষার সুযোগ বর্তমানে দেওয়া হচ্ছে, করোনা সংকটে অনেক পরীক্ষা বিলম্বিত হওয়ায় অধিকাংশের আবেদনের বয়স শেষের দিকে। তাই ব্যাক ডেটে আবেদনের সময় শেষ হওয়ার আগেই, নতুন কোটামুক্ত বৈষম্যহীন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পাশাপাশি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত চাকরিপ্রত্যাশীদের কথা বিবেচনা করে স্থায়ীভাবে চাকরির বয়স বৃদ্ধি করতে হবে।

৪. প্রতিবন্ধীদের কোটা সংরক্ষণ করে পোষ্য কোটা সহ সব কোটা সম্পূর্ণ বিলোপ করা হোক।

ব্যাখ্যা- প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে অন্যায় করেছে কর্তৃপক্ষ।

সংবিধান অমান্য করে অনগ্রসর এই শ্রেণিকে কর্মের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, সমাজের অগ্রসর শ্রেণিকে কোটা সুবিধা দিয়েছে। প্রতিবন্ধীদের কোটা সুবিধা রেখে বাকি সব বিধিবহির্ভূত কোটা বাতিল করতে হবে।

৫. নিয়োগ পরীক্ষার মেরিট লিস্টের পাশাপাশি প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ করা হোক।

ব্যাখ্যা- নিয়োগ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর জানতে পারা তার অধিকার। এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার যৌক্তিক কোনো কারণ আমরা খুঁজে পাই না। আমরা চাকরিপ্রত্যাশীরা যেটা বুঝতে পারছি, এই নম্বর পত্র না প্রকাশের পেছনে অন্যায় কোনো উদ্দেশ্য আছে। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অধিদপ্তর এমন কোনো অপরাধ সংগঠিত করছে, যেটা এই নম্বর পত্র প্রকাশ করলে অপরাধটি দৃশ্যমান হবে। তাদের প্রকাশিত ফলাফলে প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ না করার একমাত্র কারণ হিসেবে আমরা দেখছি, তারা বৈষম্যমূলক নম্বরে ফলাফল প্রস্তুত করেছে। স্বচ্ছ নিয়োগের স্বার্থে নিয়োগে নম্বর পত্র প্রকাশের পাশাপাশি মেরিট লিস্ট প্রকাশ করতে হবে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে অধিকার বঞ্চিত বেকার সমাজের এই পাঁচটি দাবি, অন্য সব নিয়োগে একইভাবে প্রাসঙ্গিক। তাই প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগসহ সব নিয়োগে কোটা পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাচ্ছি আমরা। প্রতিবন্ধীদের মতো অনগ্রসর শ্রেণিকে বঞ্চিত করে সমাজের অগ্রসর শ্রেণিকে কোটা সুবিধা প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। রাষ্ট্র কোনোভাবেই এই বৈষম্য আর একদিনের জন্যও বহাল রাখতে পারে না।

এমআই/এসএসএইচ/