চট্টগ্রাম আদালত থেকে হ্যান্ডকাফসহ (হাতকড়া) পালিয়ে যাওয়া আসামি শামসুল হক ওরফে বাচ্চুর (৬০) এখনো হদিস পায়নি পুলিশ। ঘটনার ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার হয়নি হ্যান্ডকাফটিও। তবে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে পাঁচ পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

তবে, তাদের নাম প্রকাশ করেনি জেলা পুলিশ। দায়ীদের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ। তিনি বলেন, আসামি যেহেতু পালিয়েছে, এতে কারও না কারও সম্পৃক্ততা তো আছেই। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এতে পাঁচজনের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

গত (৫ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত থেকে পালিয়ে যায় মাদক মামলার আসামি শামসুল হক ওরফে বাচ্চু। এ ঘটনায় পরদিন নগরের কোতোয়ালি থানায় সদর কোর্ট পরিদর্শক জাকের হোসাইন মাহমুদ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। দণ্ডবিধি আইনের ২২৪ ধারায় দায়ের হওয়া ওই মামলায় শামসুল হককে একমাত্র আসামি করা হয়।

শামসুলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার কালীরবাজার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। তার বাবার নাম মৃত রহমত আলী। তার বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানা মাদক মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

আদালত সূত্র ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৪ জানুয়ারি চন্দনাইশ পৌরসভা উত্তর গাছবাড়িয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিশেষ চেক পোস্ট বসায় পুলিশ। ওই দিন দুপুরে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যাত্রীবাহী বাস থেকে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ শামসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে পরদিন তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে তাকে মাদক মামলার জিআরও শাখায় বুঝিয়ে দেয় চন্দনাইশ থানা পুলিশ। এরপর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পর শামসুলকে কোর্ট হাজতে রাখা হয়। 

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়- আসামিকে হাজতে রাখার পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য হ্যান্ডকাফ লাগানো হয়। এরপর তাকে হাজতখানার সামনে সেরেস্তা টেবিলের পেছনে একটা বেঞ্চে বসতে দেওয়া হয়। ওই সময় কর্তব্যরত পুলিশ আসামিদের কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই ফাঁকে শামসুল পালিয়ে যায়। ঘটনার পরপরই ওইদিন রাতে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) শাখা এবং জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 

এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাত পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়। একই সঙ্গে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি সম্প্রতি এসপি বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে পাঁচ পুলিশকে অভিযুক্ত করা হয়।

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নগরের কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলাটির আসামি গ্রেপ্তারে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা শাখাও কাজ করছে।

এমএ/