ছবি- এইচআরডব্লিউ

বাংলাদেশের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের হয়রানির অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থাটি এমন দাবি করেছে।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কথিত এসব নির্যাতনের তদন্তসহ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দাতা দেশগুলোর প্রতি দাবি জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। একইসঙ্গে শরণার্থীদের আরও ভালোভাবে সুরক্ষা দিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়া উচিত বলে মনে করে সংস্থাটি।

২০২০ সালের জুলাই মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়ন। 

শরণার্থী এবং মানবিক কর্মীদের বরাত দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, এপিবিএনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অবনতি হয়েছে। এপিবিএন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর যোগসাজশের অভিযোগ করেছে কিছু শরণার্থী।

এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, ২০২২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ৪০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে তারা। যাদের মধ্যে ১০ জন হয়রানির শিকার হয়েছেন। ইয়াবা পাচারের ''মিথ্যা'' অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছিল।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে এমন বেশ কয়েকটি অভিযোগের কথাও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঘুষ এবং মামলার টাকা সংগ্রহে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে প্রায়শই স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রি বা আইনি খরচের জন্য টাকা ধার করতে হতো।

মানবাধিকার সংস্থাটি সরকারের কাছে এপিবিএনের ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক গবেষক শায়না বাউচনার বলেন, কক্সবাজার ক্যাম্পে পুলিশের নির্যাতনের ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দুর্ভোগ রয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

এইচআরডব্লিউকে বেশ কয়েকজন শরণার্থী বলেছেন, চেকপয়েন্টে তাদের মারধর, থাপ্পড়, লাথিসহ নানাভাবে লাঞ্ছিত করেন এপিবিএন সদস্যরা। এছাড়াও পরিবারের একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও বলছে, এপিবিএন সদস্যদের ক্যাম্প পরিচালনার বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য শরণার্থী এবং মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলোর গোষ্ঠীর সঙ্গে কর্তৃপক্ষের পরামর্শ করা উচিত। এছাড়াও প্রতিটি ক্যাম্পে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শরণার্থীদের অভিযোগ গ্রহণের জন্য প্রশিক্ষিত নন-এপিবিএন সদস্য রাখা উচিত।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় প্রতি বছর ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হলেও দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে এর অর্ধেকেরও কম। এজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়াসহ দাতা দেশগুলোর তহবিল বৃদ্ধি করা উচিত বলেও মনে করে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে শায়না বাউচনার বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার উন্নয়নে প্রকল্পগুলিকে সমর্থন করা উচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দাতা দেশগুলোর। একইসঙ্গে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পে পুলিশি নির্যাতন বন্ধ করতে চাপ দেওয়া উচিত।

এমজে