একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, আমাদের মাদ্রাসাগুলোতে এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্নভাবে জঙ্গিবাদের চর্চা ও চাষ হচ্ছে। যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে দমন করা সম্ভব নয়। নাগরিক সমাজ, সামাজিক প্রতিরোধ, সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনকে সম্পৃক্ত হয়ে এগুলো মোকাবিলা করতে হবে। 

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

শাহরিয়ার কবির বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিন্ন ধর্ম, ভিন্নমত ও ভিন্ন ধারার জীবনযাপনে বিশ্বাসী মানুষের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ এবং আমাদের সংবিধানের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। এগুলো মোকাবিলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এসব মোকাবিলায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সবসময় পাশে থাকবে।

হারিয়ে যাওয়া লোক সংগীতের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ থাকবে, যেন পর্যাপ্ত বাজেট আসে। অনেক সময় বাজেট আসলেও খরচ না হয়ে ফিরে যায়। এসব ক্ষেত্রে নজর দিয়ে বাজেটের যথাযথ ব্যবহার করতে আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের গান, লালনের গান, রবীন্দ্র কিংবা নজরুলের গানেই আমাদের হাতিয়ার। এই হাতিয়ার ব্যবহার করেই আমরা বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতাকে নির্মূল করতে চাই। 

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য শেখ হাসিনা একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছেন। তিনি আমাদের অনেক প্রগ্রামে অংশ নিয়েছেন। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একাত্তরের ঘাতক, দালাল, রাজাকার ও আল-বদরদের বিচার করতে হবে। জাহানারা ইমামের উপস্থিতিতে বাইতুল মোকাররমের সামনে সমাবেশে শেখ হাসিনা আমাদের বলেছিলেন, এই বাংলাদেশের মাটিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। তিনি সেই কথা রেখেছেন। 

তিনি বলেন, আমাদের ন্যূনতম দাবি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়া, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া। ১৯৭২ এর সংবিধানকে আমরা বলি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর সেটি ভেস্তে যায়। পঁচাত্তরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানই জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারই স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় এসেছেন। যুদ্ধাপরাধী দলটির শীর্ষ নেতাদের গাড়িতে রক্তে রঞ্জিত পতাকা তুলে দিয়েছেন। এখনো বিভিন্ন জায়গায় তাদের লোকজন শিকড় গেঁড়ে আছে। 

শাহরিয়ার কবির বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা শুধু আঞ্চলিকভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেই প্রশংসনীয়। বিশেষ করে দেশে আত্মপ্রকাশ করা জঙ্গিদের দমন করা সম্ভব হয়েছে। জঙ্গিদের রাজনৈতিক দর্শন বা আদর্শ আছে তা মোকাবিলায় আমাদের হাতিয়ার নির্মাণ করতে পারিনি। সেই হাতিয়ার হতে পারে আমাদের সংস্কৃতি। সেখানে নজর দিতে হবে।

‘উগ্র মৌলবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক তামসিকতার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদীপ্ত ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটুক’—এই স্লোগানে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। বেলা ১১টায় বাংলা অ্যাকাডেমিতে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন নরওয়ের লোক সংগীত গবেষক, লেখক ও আলোকচিত্র শিল্পী ওয়েরা সেথের।

দিনব্যাপী আয়োজনে কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, খ্যাতিমান বাংলাদেশী অভিনেতা, মঞ্চ নির্দেশক এবং নির্মাতা রামেন্দু মজুমদার, বাংলাদেশী মঞ্চনাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক এবং মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক মুনতাসীর মামুন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ও সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভিন।

জেইউ/কেএ