যানজট কম থাকায় বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় এসেছিলেন মুসল্লিরা। তবে আখেরি মোনাজাত শেষে ফেরার পথে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। যাত্রীবাহী বাসে প্রচণ্ড ভিড় থাকায় দলে দলে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন অনেকে। পথিমধ্যে অনেকে আবার মোটরসাইকেল, ভ্যান, অটোরিকশা ও পিকআপে চড়ে রওনা করছেন। এক্ষেত্রে দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাদের। 

রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর বাস স্ট্যান্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আখেরি মোনাজাত শেষ হতে না হতেই বাড়ি ফিরতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মুসল্লিরা। কিন্তু সেই অনুযায়ী রাস্তায় পর্যাপ্ত বাস নেই। যে কয়টি বাস রয়েছে, সেগুলোও দূরের যাত্রীদের নিচ্ছে। এছাড়া বাসগুলো ভাড়াও হাঁকাচ্ছে দ্বিগুণ। 

বিমানবন্দর, মহাখালী ও মগবাজার হয়ে সায়েদাবাদ রুটে চলাচল করে বলাকা পরিবহন। এই লোকাল বাসটি ১০০ টাকার নিচে কোনো যাত্রী নিচ্ছে না। কেউ যদি মহাখালী নামেন তাকেও ১০০ টাকা দিতে হবে বলে জানানো হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে দ্রুত গন্তব্যে ফিরতে ১০০ টাকা দিয়েই বাসে উঠছেন যাত্রীরা। 

এদিকে রাইদা, ভিক্টর ক্লাসিক, তুরাগ ও অনাবিলসহ রাজধানীতে চলাচলকারী পরিবহনগুলোর ক্ষেত্রে একই দৃশ্য দেখা গেছে। নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে বাসগুলো। 

এয়ারপোর্ট থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত ৫০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে পিকআপগুলো। আর রামপুরা পর্যন্ত নিচ্ছে ১০০ টাকা করে। 

মোটরসাইকেলে চড়ে গন্তব্যে যেতে গুনতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা। আর যারা যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান কিংবা সদরঘাট যাচ্ছেন, তাদের কাছ নিচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকা। তবে বেশিরভাগ যাত্রীদের পায়ে হেঁটে হেঁটে দলে দলে ইজতেমা মাঠ ছাড়তে দেখা গেছে।

এই অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন ইজতেমা ময়দান থেকে কম দূরত্বের এয়ারপোর্ট, খিলক্ষেত, বাড্ডা ও রামপুরাসহ আশপাশের এলাকার মুসল্লিরা। উপায় না পেয়ে অটোরিকশা, ভ্যান ও পিকআপে চড়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটছেন তারা। আবার এগুলোর কোনোটিতেই চড়ার সুযোগ না পেয়ে দলে দলে পায়ে হেঁটে ফিরছেন অনেকে। 

ভাড়া বেশি রাখার প্রসঙ্গে আকাশ পরিবহনের কন্ট্রাক্টর নাজমুল ইসলাম শান্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে যাত্রীরা গাড়ি পাবে না। যাত্রীদের নিয়ে এখন থেকে গেইট লক করে গাড়ি ছাড়ব। রাস্তায় আর লোক তুলব না। তাই ফিক্সড ভাড়া নিচ্ছি। সদরঘাটে যাওয়ার জন্য ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।   

রাজধানীর মোহাম্মদপুরগামী প্রজাপতি পরিবহনের কন্ট্রাক্টর ঢাকা পোস্টকে বলেন, রিজার্ভ যাচ্ছি, তাই ভাড়াও একটু বেশি নিচ্ছি। কারণ আসার সময় খালি আসবে হবে। 

নর্দা থেকে সকালে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া আশিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিছু না পেয়ে পিকআপে উঠে বসলাম। ২০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ১০০ টাকা। 

উল্লেখ্য, দুপুর ১২টার পর শুরু হয় আখেরি মোনাজাত। শেষ হয় ১২টা ৪৪ মিনিটে। এ সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে তুরাগতীর। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় আকুতি জানান লাখ লাখ মুসল্লি। অনেকে চোখের জল ফেলে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। বিশ্ব শান্তির জন্য দোয়া করেন অনেকে।

আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি। এর আগে তিনি হেদায়েতি বয়ান করেন। 

এদিন সকাল থেকেই আখেরি মোনাজাতের কারণে ইজতেমা মাঠের আশপাশের সড়কের যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল। যারা ইজতেমার ময়দানে পৌঁছাতে পারেননি, তারা পথে-ঘাটে, বাস, রিকশা, আশপাশের মসজিদ, দোকান-পাটে বসেও মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। ফেসবুক লাইভ, এফএম রেডিও, হ্যান্ড মাইক, মসজিদের বড় মাইক ও অনলাইনের মাধ্যমে ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন অনেকে। 

আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে উত্তরা, টঙ্গী ও গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কারখানা, মার্কেট, বিপণী-বিতান ও অফিসসহ সবকিছু বন্ধ ছিল। 

এমআই/এএসএস/কেএ