‘যেখানেই যাবেন ভাড়া ১০০, রাজি থাকলে উঠেন, নইলে রাস্তা দেখেন। যারা সায়েদাবাদ যাবেন তারা ১০০ টাকা ভাড়া দিয়েন যাবেন। একদম সিটিং যাব, গেটলক। কেউ যদি কুড়িল, নতুন বাজার, বাড্ডা, রামপুরাও যেতে চাইলেও ভাড়া ১০০ টাকাই’- এভাবেই উত্তরার হাউজ বিল্ডিংয়ের সামনে থেকে যাত্রী তুলছিলেন রাইদা পরিবহনের চালক আবু হানিফ।

তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। রোববার (২২ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টা থেকে ১২টা ৪৪ মিনিট পর্যন্ত আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী।

আখেরি মোনাজাত শেষ হতেই প্রধান সড়কে ঢল নামে লাখো মানুষের। রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে শত শত বাস বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রী তুলছে। কয়েকজন যাত্রী উঠলেই হেলপার বাসের গেট লাগিয়ে দিচ্ছেন। এরপর গেট দিয়ে মাথা বের করে যাত্রী ডাকছেন তারা। তবে সব বাসেরই দরজা বন্ধ। এদিকে সড়কে লাখ লাখ মানুষের বাড়ি ফেরার অপেক্ষা। এ পরিস্থিতিতে যাত্রীদের রীতিমত জিম্মি করে ভাড়া আদায় করছে বাসগুলো।

বাসের গেট লাগিয়ে হাঁকা হচ্ছে, ‘যেখানেই যাবেন ভাড়া ১০০’। এই শর্তে যেই যাত্রী রাজি হচ্ছেন কেবল সেই যাত্রীকেই গেট খুলে বাসে তুলছেন হেলপার। জোর করে অতিরিক্ত এমন ভাড়া আদায়ে ক্ষুদ্ধ হচ্ছেন ইজতেমায় আসা যাত্রীরা। কিন্তু চালক-হেলপারের কাছে অসহায় যাত্রীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বাসে উঠছেন।

বাসের গেট বন্ধ করে একই রুটের যাত্রীর ডাকছিল তুরাগ বাসের একজন হেলপার। তিনিও গেটের ভেতর থেকে মাথা বের করে যাত্রী হাঁক-ডাক দিচ্ছিলেন, ‘যেখানেই যাবেন ভাড়া ১০০ টাকা’।

বাসের বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে ইজতেমায় আসা এরশাদ আলী বলেন, ‘যাব রামপুরা, কিন্তু তারা ১০০ টাকা ভাড়া নেবে। বলছে, যেখানেই নামেন, ভাড়া একই। মানুষ এসেছে ইজতেমায়, কিন্তু এসব বাসওয়ালাদের কোনো সহানুভূতি নেই। এত মানুষ দেখে তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ব্যবসা করার জন্য যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া আদায় করছে তারা। মানুষও বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই যাচ্ছেন।’

ইজতেমা ফেরত মানুষদের জিম্মি করে এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন কেন- জানতে চাইলে রাইদা বাসের চালক হুমায়ন কবীর বলেন, ‘আসলে ইজতেমার কারণে বাসের ট্রিপ বন্ধ ছিল। চালকরা সবাই বাস নিয়ে বসে ছিল, যাত্রীর অপেক্ষায়। ইজতেমা শেষ হওয়ায় প্রচুর যাত্রী, তাই সবাই গেটলক ট্রিপ মারছে। এক একটা বাস গেটলক ট্রিপ মারার একটাই সুযোগ পাবে। যে কারণে সবাই একটু বেশি নিচ্ছে, আমরাও তাই নিচ্ছি।’

এদিকে বাসের পাশাপাশি বহু পিকআপ ভ্যানও অপেক্ষা করছে ইজতেমা ফেরত যাত্রীবহনের জন্য। তারা রাজধানীসহ দেশে বিভিন্ন গন্তব্য যাচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়ার বিনিময়ে। এছাড়াও সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ৪ জন করে যাত্রী নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছেন। আর অ্যাপ ছাড়াই চুক্তিতে অতিরিক্ত ভাড়ায় বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে অপেক্ষা করছেন মোটরসাইকেল চালকরা।

এএসএস/ওএফ