পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

সিলেট বিভাগে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং বিআরইবি সদর দফতরের ভৌত সুবিধাদি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৫তলা ফাউন্ডেশনে আটতলা আবাসিক ভবন নির্মাণের কথা ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো)। বাস্তবায়ন পর্যায়ে এসে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, ১৫তলা ফাউন্ডেশনে আটতলা ভবনের প্রয়োজন নেই। তাই আটতলা ফাউন্ডেশনে পাঁচতলা ভবন তৈরি হচ্ছে।

প্রকল্পের আকার ছোট হওয়ায় ৮৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। বেঁচে যাওয়া এ অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দিচ্ছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রকল্পের কাজ শেষ হলে টাকা ফেরত যাবে ঠিক আছে; তবে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কোনো কাজ সেভাবে কমানো হয়নি। কাজ কমিয়ে টাকা ফেরত দিচ্ছে, বিষয়টা এমন নয়। মালামাল ক্রয়ে বিভিন্ন টেন্ডারে টাকা বেঁচে গেছে

মো. নজিব, যুগ্ম প্রধান, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করতে না পারায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাই দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৮৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ফেরত দিতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব দিয়েছে বাপবিবো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ ফেব্রুয়ারি এ প্রকল্পটির ওপর ‘প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির’ (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. নজিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছুদিন আগে আমরা বৈঠক করেছি। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে টাকা ফেরত যাবে ঠিক আছে; তবে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কোনো কাজ সেভাবে কমানো হয়নি। কাজ কমিয়ে টাকা ফেরত দিচ্ছে, বিষয়টা এমন নয়। মালামাল ক্রয়ে বিভিন্ন টেন্ডারে টাকা বেঁচে গেছে। তার মানে যে রেটে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল সেই রেটেরও কমে দরপত্রে অংশগ্রহণ করেছে কোম্পানিগুলো। ফলে প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও প্রায় ৮৪ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত যাবে।’

এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) মো. মহসিন আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রকল্পটি সংশোধনীর জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনীর প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যয় কমানো। তার মানে এ প্রকল্পে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। মূলত, মালামাল ক্রয় ও কনস্ট্রাকশন খাতে এ অর্থ বেঁচে গেছে।’

প্রকল্পটি সংশোধনীর জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনীর প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যয় কমানো। তার মানে এ প্রকল্পে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। মূলত, মালামাল ক্রয় ও কনস্ট্রাকশন খাতে এ অর্থ বেঁচে গেছে

মো. মহসিন আলী, প্রকল্প পরিচালক

দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবনায় ফ্ল্যাটের আকার দুই হাজার ৪৬ বর্গমিটার থেকে কমিয়ে এক হাজার ২৭৫ বর্গমিটার করা হয়েছে। কিন্তু আয়তন কমলেও ব্যয় আরও দেড় কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে পিডি বলেন, ‘এটা তো এস্টিমেশন কস্ট বা সাইজ। বাস্তবে কাজ করতে গিয়ে আরও কমে যেতে পারে। ফলে এখনও সঠিকভাবে কিছু বলতে পারছি না। প্রকল্পটির ডিজাইনের সময় পিডব্লিউডির রেট সিডিউল চালু ছিল ২০১৪ সালের। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের জমি পেতে অনেক দেরি হয়। তিনবারে ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারি। টেন্ডার ২০১৯ সালে, তখন কিন্তু পিডব্লিউডির রেট সিডিউল ২০১৮ চালু হয়েছিল। রেট সিডিউল বাড়ার ফলে প্রকল্পটিতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যয় বাড়ার কথা।’

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘প্রথম সংশোধনীর সময় প্রকল্পের দায়িত্বে আমি ছিলাম না। আমার আগেও দুজন এ প্রকল্পের পিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী হয়েছে ২০১৮ সালে, আর আমি এখানে যোগ দেই ২০১৯ সালের এপ্রিলে। প্রকল্পটির সংশোধন হলে আগামী জুনের মধ্যে এটি শেষ করতে পারব।’

যেসব বিষয় জানতে চায় পরিকল্পনা কমিশন

অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে একটি জিপ কেনা বাবদ ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু কেনা হয় ৯৯ লাখ ১০ হাজার টাকায়। অতিরিক্ত ব্যয়ে গাড়ি ক্রয়ের ব্যাখ্যা দিতে হবে।

উল্লেখ্য, অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী, প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য ৯৪ লাখ টাকা এবং তৃতীয় গ্রেড বা তার নিচের কর্মকর্তাদের জন্য ৫৭ লাখ টাকায় গাড়ি কেনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, উপকেন্দ্র/সুইচিং স্টেশন/সিলেট আঞ্চলিক ও অ্যান্ডএম কমপ্লেক্সের ভূমি অধিগ্রহণে অধিক সময় ব্যয় হয়। এছাড়া, কোভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘ সময় প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের হালনাগাদ আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি জানাতে হবে।

ভবনের ফ্ল্যাটের আকার ২৭৪৬ বর্গমিটার থেকে কমিয়ে ১২৭৫ বর্গমিটার করা হয়েছে। আকার কমলেও ব্যয় এক কোটি ৪৬ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণও জানাতে হবে।

এসআর/এসকেডি/এমএআর/এমএমজে