পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, এই বছরটা অনেক খারাপ। কারণ এটি নির্বাচনের বছর। এবছর অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে পারে। মানবাধিকার কমিশন বা গণমাধ্যম বা আমার মতো উন্নয়ন কর্মীরা এটা খুব বেশি কমাতে পারবো না।

তিনি বলেন, এটা হলো রাজনীতিবিদদের কাজ। তারা বলেন, রাজনীতি করেন মানুষের জন্য। কিন্তু দেখা যায় যে তারা অনেক কাজ করেন, যেটা মানুষের অধিকারের বিরুদ্ধে। 

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত মানবাধিকার সুরক্ষায় গণমানুষের প্রত্যাশা : গণমাধ্যম ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সমন্বিত প্রয়াস' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। ক্ষমতাবানরা নিজের স্বার্থে অন্যের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা পৃথিবীতে বৈষম্য আছে। ব্যক্তি পর্যায়ের অনেক কথা হয়েছে, ফারদিনের (বুয়েট শিক্ষার্থী) বিষয়ে কথা হয়েছে, সাংবাদিকদের কথা হয়েছে। মানবাধিকার কমিশন এসব বিষয় দেখতে পারে।

তিনি বলেন, গ্রামে নারী নির্যাতন, অভিভাবক নির্যাতন ও মাদকের বিস্তার ঘটছে। পরিবার পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে। গোষ্ঠী ও কতগুলো অঞ্চলের মানুষ এখনো পিছিয়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে না তাদের ২০১৪ সালের কর্মকাণ্ড আমরা দেখেছি। আগামী নির্বাচনের সময়ে আবার একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। এই বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

সভায় প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, মিজানুর রহমান কমিশনের সময় আমরা দেখেছি মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রম সরগরম ছিল। এরপর যারা কমিশনে এসেছেন তারা নির্বাক ছিলেন। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার সময় আমরা মানবাধিকার কমিশনের অস্তিত্ব খুঁজে পেতাম।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, র‍্যাব সদস্য ছিনতাইয়ের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেখানে মানবাধিকার কমিশনের পদক্ষেপ আমরা জানতে পারিনি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে রেখেছে এই বিষয়েও মানবাধিকার কমিশনের পদক্ষেপ আমরা জানতে চাই।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলায় ৯৫ বার সময় নিয়েও তদন্ত শেষ করতে পারে না আমাদের সংস্থাগুলো। এখানে মানবাধিকার কমিশন কী করেছে। মানবাধিকার কমিশন সুপারিশ করলো, কিন্তু সুপারিশের ফলোআপ হলো না। তাহলে মানুষ কমিশনের ওপর আস্থা রাখবে কি করে।

এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন বলেন, যার যত ক্ষমতা তার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। ক্ষমতাবানদের বাইরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নেই। আমরা আশা করবো, কমিশন এই ক্ষমতাবানদের ভয় পাবে না। অন্য কমিশনের মতো মানবাধিকার কমিশনকেও যেন মানুষ নখদন্তহীন প্রতিষ্ঠান মনে না করে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে মানবাধিকার কমিশন যেন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সারা পৃথিবীতেই মানবধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। সাংবাদিকরা মানুষের জন্য কাজ করছে। মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ভোগ করে। তারপরেও আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলে যাবো।

ইউএনবি সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, ফারদিনের ঘটনায় আমরা দেখেছি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একেক সময় একেক কথা বলছে। এই ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়ে তদন্ত করতে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা সংশোধনের চেষ্টা করছি। কারণ যেকোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জনগণের অধিকার রয়েছে তার প্রতিকার পাওয়ার।

তিনি মূল প্রবন্ধে বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও গণমাধ্যমের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। এই দুই প্রতিষ্ঠানের সেতু বন্ধন আরও সুদৃঢ় হওয়া দরকার। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক বা সেরিমনিয়াল প্রতিষ্ঠান নয়, যেকোনো প্রকারের দীর্ঘসূত্রিতা অতিক্রম করে কমিশন মানুষের অধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে চায়। এজন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। আমাদের বিশ্বাস, গণমাধ্যম ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক সঙ্গে কাজ করলে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে আমরা শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবো। যা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথকে আরও সুগম করবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাজী আরফান আশিক, সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ঊর্ধ্বতনরা।

এমএইচএন/জেডএস