‍দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, তামাক জাতীয় পণ্য সেবন মানে মৃত্যুর দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী তামাক কোম্পানিগুলো। তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু, অসুস্থতা এবং অন্যান্য বিধ্বংসী প্রভাব নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হলেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো সুচতুরভাবে তাদের এই চরিত্র আড়াল করার চেষ্টা করছে।

তিনি আরও বলেন, তামাক চাষ, তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন এবং ব্যবহার করার আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে ভালো করে জানা সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে, এটা দুঃখজনক।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়র (ডর্প) আয়োজিত ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের পূর্বেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে নীতিনির্ধারকের কাছে প্রত্যাশা’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

এনামুর রহমান বলেন, প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন ২ কোটি ২০ লাখ এবং ধূমপায়ী ১ কোটি ৯২ লাখ। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। দৈনিক তামাকের প্রভাবে মৃত্যুবরণ করে ৪৪২ জন।

তিনি বলেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া প্রস্তুত ও প্রয়োজন মাফিক তার সংশোধন করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনীতে যেসব প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এগুলো হলো- সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা, বিক্রির স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করা, তামাক কোম্পানিগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি (সিএসআর) বন্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, ই-সিগারেট আমদানি বাজারজাত বন্ধ করা এবং তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আকার বাড়ানো। আমি মনে করি এই আইনে তামাকের প্রসার রোধে যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাবগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং আজকের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে দ্রুত আইনটি পাস হলে তামাকজাত পণ্য সেবনের হার অনেকাংশে কমে আসবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪০ সালের আগেই বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করতে হবে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি যে সব বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তার মধ্যে অন্যতম হলো তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে সব ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এসডিজি বাস্তবায়নে আইনগুলোকে এফটিসিটিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা।

তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তামাকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে অবদান রাখছে। দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত জনগোষ্ঠীর কাছে তামাকের নেতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়। এতে করে জনগণ বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার হয় না ও তামাকজাত পণ্য সেবনে নিরুৎসাহিত হয়। এছাড়াও দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ কার্যক্রমে, সুবিধাভোগী হিসেবে তামাক নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংসদে দ্রুত অনুমোদন পেলে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে সরকারের যে অঙ্গীকার তার বাস্তবায়নের পথে আমরা আরেক ধাপ এগিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের আগেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে এই আইনটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

ডর্পের নির্বাহী উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব মো. আজহার আলী তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) কাজী জেবুন্নেসা বেগম, সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার, বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, ডর্পের প্রতিষ্ঠাতা সিইও এএইচএম নোমান প্রমুখ।

এমএইচএন/এসএম