অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে সামনে রেখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্টল নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা (ছবি : ঢাকা পোস্ট)

দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের মেলা। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩। এবার মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘পড় বই গড় দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করবেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বিশাল মাঠজুড়ে বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টলের অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। কাঠ কাটা, জোড়া দেওয়া, আর পেরেক-হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখর হয়ে আছে গোটা উদ্যান।

স্টল নির্মাণের কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ হলেও অনেক প্যাভিলিয়নের কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। স্টল নির্মাণে অসংখ্য শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন শিল্প নির্দেশকরা। সবকিছু তদারকি করছেন প্রকাশকরা। আরও কয়েকদিন চলবে স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণ ও সজ্জ্বার কাজ। তারপর বসবে মাসব্যাপী প্রাণের মেলা। যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, এবারের মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোট ৪৭০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। এরমধ্যে ৩৬৭টি প্রতিষ্ঠান সাধারণ ক্যাটাগরিতে স্টল দিচ্ছে। শিশু চত্বরে স্টল হচ্ছে ৬৯টি। আর বড় বড় প্রকাশকরা প্যাভিলিয়ন বানাচ্ছেন ৩৪টি। 

অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠানের স্টল ১০৩টি এবং প্যাভিলিয়ন থাকছে ১৪৭টি।

মাসব্যাপী এ বইমেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলবে।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজে যুক্ত আব্দুল মান্নান নামে এক শ্রমিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্যাভিলিনের নির্মাণ কাজ আজই শুরু করেছি। যথাসময়ে শেষ করা একটু কঠিন হবে, তবু চেষ্টা করছি। কাজটা যদি ১০দিন আগে থেকে শুরু করা যেত তাহলে ভালো হতো। এখন দিন-রাত কাজ করে শেষ করতে হবে।

জিনিয়াস প্রকাশনীর কাজে যুক্ত নির্মাণ শ্রমিক ছোটন বাড়ৈ বলেন, আজকেই মাত্র কাজটা শুরু করলাম। সকাল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। ৩১ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা আছে। আমরা সে অনুযায়ী চেষ্টা করছি।

অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মাসুদ রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২২ তারিখ লটারির পর আমরা কাজ শুরু করেছি। পুরোদমে কাজ চলছে। প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ। ৩০ তারিখের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। প্রবেশ মুখে প্যাভিলিয়ন পাওয়ায় আমরা খুশি। আশা করি এবার ভালো কিছু হবে।

শোভা প্রকাশের প্যাভিলিয়নের সামনে দেখা হয় প্রকাশক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ চলছে। আশা করি যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন হবে। কাগজসহ সবকিছুর দাম বাড়ায় এবার আমরা কিছুটা শঙ্কিত। বইয়ের দাম অনেক বাড়বে। তবে এবার স্টল বিন্যাসটা ভালো হয়েছে।

অমর একুশে বইমেলার সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলার প্রস্তুতি প্রায় ৮০ ভাগ শেষ। স্টল-প্যাভিলিয়ন নির্মাণ কাজ চলছে। মেলায় বাংলা একাডেমি অংশে মূল মঞ্চ থাকবে। আর গ্রন্থ উন্মোচন ও লেখক বলছি মঞ্চ থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সবচেয়ে বেশি স্টল ও প্যাভিলিয়ন থাকছে। মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরূল হুদাকে সভাপতি করে ৩১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি নানা বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

এর আগে বইমেলার সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রস্তুতি ভালো আছে। এখন পর্যন্ত সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যাচ্ছে। বইমেলার জন্য একটা নীতিমালা আছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বইমেলায় অংশগ্রহণ করছে, তাদের সেই নীতিমালা মানতে হবে। যদি কেউ নীতিমালার বাইরে যায়, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এজন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

এবার বইমেলা শেষে ২০২২ সাল জুড়ে প্রকাশিত বিষয় ও গুণগত মানসম্মত বইকে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এছাড়া মেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য দেওয়া হবে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’।

প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচার করে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এর বাইরে স্টলের নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।

এইচআর/কেএ/জেএস