‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ পরিচয়ে এক দল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নতুন ভবনের অ‍্যাপস ভিত্তিক অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস কর্মী স্বপনকে (৩০) মারধরের অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা যায়নি।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে নতুন ভবনের নিচতলায় এ ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন>>মারধরকারী যেই হোক, তথ্যপ্রমাণ-ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা : পুলিশ

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহত স্বপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার দুপুরে কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার কাছে কয়েকটি টেস্ট কোথায় হয় সে বিষয়ে জানতে চায়। পরে আমি বলি টেস্টগুলো দ্বিতীয় তলায় হয়। কিন্তু তারা কয়েকটি টেস্টের নাম ধরে আমার কাছে জানতে চায় এই টেস্টগুলো কোথায় হয়। তাদের বললাম আমি এখানে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের কাজ করি। আমি সঠিক বলতে পারি না। পরে তারা আমাকে বলে তুই জানিস না তাহলে এখানে বসেছিস কেন, এই বলেই আমাকে ১০-১২ জন মিলে কিল ঘুসি মারতে মারতে ডেস্ক থেকে বের করে ফেলে। তারা আমাকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মেরে আমাকে আহত করে। এ সময় তারা ঢাকা ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী’ বলে পরিচয় দেয়।

তিনি আরও বলেন, আমি তাদের বারবার বলেছি আমি এখানে নতুন। আর এই টেস্ট কোথায় হয় সবগুলোর বিষয়ে কিছু বলতে পারি না। তাদের বারবার বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা না শুনে আমাকে মারধর করে। বর্তমানে আমি বাসাতেই আছি।

আরও পড়ুন>>চিকিৎসককে মারধর, কর্মবিরতিতে ঢামেকের ইন্টার্নরা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা বলে লাভ নেই। তারা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ে সামান্য বিষয় নিয়ে প্রায়ই মেডিকেলে এসে ‘ঢাবি শিক্ষার্থী’ পরিচয় দিয়ে ডাক্তার ও কর্মচারীদের ওপরে চড়াও হয়। তারা সামান্য বিষয় নিয়েই এখানে গন্ডগোল করে। শনিবার অ্যাপস ভিত্তিক অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের কর্মীকে কোনো কারণ ছাড়াই মারধর করে গুরুতর আহত করে। তাদের সবার সিসি টিভি ফুটেজ পরিচালক মহোদয়ের কাছে আছে। কর্তৃপক্ষ জানলেও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।


ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপনারা জানেন ঢাকা মেডিকেলে প্রতিদিন শত শত নয়, হাজার হাজার রোগী এখানে চিকিৎসা করাতে আসে। আমরা সব সময় যে চিকিৎসা সেবা দিতে পারি এমনটা নয়। সঙ্গত কারণে আমাদের লোকজন রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারে না। শনিবার একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমাদের মোবাইল ভিত্তিক অ‍্যাপস অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সেবা চালু করেছি। সেখানে যে সহযোগিতা করে ছেলেটা তার কাছে যে একটি তথ্য জানতে চায় যেটি বলার জন্য সে আসলে ক্যাপাবল নয়। স্বাভাবিকভাবেই বলেছে এটি তার জানা নেই। একপর্যায়ে আমরা দেখলাম সিসি টিভি ফুটেজে তার ওপরে কয়েকজন ইয়াং ছেলে খুব চড়াও হয়। সে একটি সেবা দেওয়ার জন্য বসেছিল। এখানে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে অনেকে প্রতারিত হয়, যার কারণে আমরা অ্যাপসের মাধ্যমে একটি সেবা চালু করেছি যাতে কেউ হয়রানি বা প্রতারিত না হয় এবং ভাড়া বেশি দিতে না পারে। যেখানে বিষয়টি বাধাগ্রস্ত করেছে এবং ছেলেটাকে মারধর করেছে।

আরও পড়ুন>> চিকিৎসককে মারধর, জড়িত ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিচার দাবি

তিনি বলেন, আমরা একটা জিনিস খেয়াল করেছি যে, শুধু ঢাকা মেডিকেলেই হেলথ সেক্টরে প্রায় এই ধরনের ঘটনা ঘটে। অন্যান্য জায়গায় এই কাজটি করার সাহস পায় না তারা। তারা যখন ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ পরিচয় দেয় তখন সাধারণত কেউই তাদের কিছু বলতে চায় না। তাদের বিরুদ্ধে যদি সঠিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে তারা এমন কাজ করতে পারত না।

পরিচালক আরও বলেন, এই ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে আমাদের কাছে তাদের সিসি টিভি ফুটেজ আছে। এমন ঘটনা মাঝেমধ্যেই এখানে ঘটে। তারা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শিক্ষার্থী পরিচয় দেয় কিন্তু তারা আসলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কিনা সেটি আমরা নিশ্চিত নই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি।

এসএএ/এমএ