সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন বলেছেন, জাতিকে ধ্বংস করতেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তক শুধু সংশোধন নয়, বাতিল করতে হবে। 

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যবিরোধী পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও শিক্ষায় মৌলিক সংস্কার শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুর রবের সভাপতিত্বে শিক্ষা ও গবেষণা সংসদ ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর চৌধুরী মাহমুদ হাসান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যক্ষ সৈয়দ আব্দুল আজীজ।

আরো পড়ুন >> ৯ লেখক ও ২ সম্পাদকের লেখা পাঠ্যবইয়ে ‘চৌর্যবৃত্তি’!

শিক্ষা ও গবেষণা সংসদ ঢাকার পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরন্নবীর পরিচালনায় জাতীয় সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বি.আই.আই.টি) এর পরিচালক ড. এম আব্দুল আজিজ, তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল ড. খলিলুর রহমান মাদানী, ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন দেশবরেণ্য শিক্ষাবীদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্টসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। 

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলন বলেন, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন গত দশ বছর ধরে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ভুল হচ্ছে। সরকার আজ দলীয় ও সাম্প্রদায়িক বিষয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য পাঠ্যবই প্রণয়ন করেছে। ক্লাস সেভেনের বিজ্ঞান বইয়ে নৌকা বিষয়ক প্রবন্ধ আছে। সরকার প্রধানের ছবি কি পাঠ্যবইয়ে থাকতে পারে? না এটা পারে না, কিন্তু বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র দেখাতে গিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, শিক্ষামন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে সরকারের ব্যক্তিদের ছবি পাঠ্যবইতে দেওয়ার কোনো নজির নেই। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, জাতিকে ধর্মহীন করার জন্যই পাঠ্যপুস্তক থেকে মুসলমাদের ধর্ম বিশ্বাস ও ইসলামী চেতনা সংশ্লিষ্ট লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের সঙ্গে যারা জড়িত তারা পরিকল্পিতভাবে এটা করেছে। যারা শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছে তারা তাদের আদর্শের আলোকে করেছে। 

বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদ বলেন, পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামী বিষয়গুলো সরিয়ে দেওয়ায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে। যার প্রভাব তাদের নির্বাচনেও পড়তে পারে। সরকার আসবে সরকার যাবে, কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক থাকবে। ইসলাম বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে কিছু বলেনি। ইসলাম মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ইসলাম উদারতা, মানবতা ও উন্নত চরিত্র গঠনের শিক্ষা দেয়। এমন শিক্ষা ব্যবস্থা হওয়া উচিত নয়, যাতে মানুষ ইসলাম ধর্ম থেকে দূরে সরে যায়। পরবর্তী প্রজন্মকে দুর্ণীতিমুক্ত ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ইসলামী নৈতিকতা শিক্ষাব্যবস্থায় থাকতে হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, নীতি-নৈতিকতাবিহীন শিক্ষা ব্যবস্থা পাঠ্যপুস্তকে দেওয়া হয়েছে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পাশাপাশি এখন শিক্ষা ব্যবস্থায় আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে উন্নত জাতি গঠন সম্ভব নয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, দেশের সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করা হয়, এটা দুঃখজনক। যারা পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন তারা দায়সাড়াভাবে করেছে। অথবা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেছে।

প্রবন্ধ উপস্থাপক অধ্যক্ষ সৈয়দ আব্দুল আজীজ বলেন, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বইগুলোর বিভিন্ন অধ্যায়ে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাংলার বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের কথা আনা হয়েছে। কিন্তু এসব আলোচনায় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে ইসলামী আন্দোলনগুলোকে। শহীদ তিতুমীর এবং ফরায়েজী আন্দোলনের কথা একেবারেই অনুপস্থিত। কোথাও উল্লেখ নেই ১৮৫৭ সালের বিপ্লবে আলেমগদের ভূমিকা এবং আত্মত্যাগের। 

তিনি বলেন, শিক্ষার মূল লক্ষ্য হতে হবে সৎ, নৈতিক চরিত্রবান, দেশপ্রেমিক এবং একবিংশ শতকের দক্ষ নাগরিক তৈরি করা।মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য পাঠ্যপুস্তক সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক নাগরিক প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ ও চিন্তাশীল অভিভাবকদর সমন্বয়ে জাতীয় শিক্ষা সংস্কার কমিটি গঠন করতে হবে।

জেইউ/জেডএস