বর্তমানে ও আসন্ন রমজান মাসে দেশে গরম মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের এলসি খুলতে দিতে হবে। নইলে মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব নয়। কারণ দেশের মসলার বাজার সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর। 

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গরম মসলার মূল্য এবং সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেম জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। 

এসময় ভোক্তা অধিকারের ডিজি বলেন, গরম মসলার বাজার বেশ কয়েকদিন ধরে অস্থির দেখা যাচ্ছে। আসন্ন রমজান মাসকে কেন্দ্র করে গরম মসলার বাজার যেন অস্থির না হয় সেই লক্ষ্যে এই সভা আয়োজন করা হয়েছে। আমরা দেখছি ইতোমধ্যে জিরার দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আসন্ন রমজান মাসকে কেন্দ্র করে গরম মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে হবে।

তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা যদি রমজানে গরম মসলার দাম বৃদ্ধি করেন তাহলে আমরা অভিযানের পাশাপাশি কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেব। এছাড়া ফুডগ্রেড রংয়ের পরিবর্তে যদি গার্মেন্টসের রং খাবারে মেশানো হয় তাহলেও আমরা কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করব। এছাড়া বাজারে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে মূল্য তালিকা থাকতে হবে। 

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বাবু বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলো মসলার জন্য আমাদের এলসি দিচ্ছে না। আর মসলার বাজার আমদানি নির্ভর। জিরাসহ অধিকাংশ মসলা আফগানিস্তান, তুরস্ক ও ভারত থেকে আসে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তান ও তুরস্ক কোনো এলসি দিচ্ছে না। আমরা এখন শুধুমাত্র ভারত থেকে জিরা আমদানি করেছি। এখন ভারতেও জিরার দাম বেড়েছে। এছাড়া ডলারের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছি। তারপরও আমরা এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য চেষ্টা করছি। আশা করছি রমজানে আমরা মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে পারব।

তিনি বলেন, রমজানে গরম মসলার এতো চাহিদা থাকে না। তবে রমজান শেষে ঠিক দুইমাস পর কোরবানির ঈদ। তখন কিন্তু গরম মসলার প্রচুর চাহিদা থাকে, সেসময় একটা সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এই মুহূর্তে যদি এলসির সমস্যার সমাধান করা না হয় তাহলে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রমজান উপলক্ষে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভোক্তা অধিকারের অভিযান স্থিতিশীল করতে হবে। এছাড়া আমদানি শুল্ক ফিক্সড রাখতে হবে ও কমাতে হবে।

ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়ে ভোক্তা অধিকারের ডিজি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, এলসির বিষয়টি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। এছাড়া মসলার আমদানির বিষয়ে এলসি খোলা নিয়ে আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব। এই সমস্যা যেন দ্রুত সমাধান হয় সে বিষয়ে আমরা কাজ করব। এছাড়া শুল্ক কাঠামোর বিষয়ে কথা হয়েছে, এ বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের আমরা জানাব।

রমজানে অভিযান স্থিতিশীলের বিষয়ে তিনি বলেন,  অভিযানের সময় আমরা দেখি ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। দোকান বন্ধ করে চলে যাওয়া মানেই এখানে কোনো একটা সমস্যা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা যদি অসাধু উপায়ে মূল্য বৃদ্ধি করা বন্ধ করে ও গার্মেন্টস শিল্পের রং মেশানো না হয় আমরা অবশ্যই অভিযান শিথিল করব। 

সভায় কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মুখপাত্র কাজী আবদুল হান্নান বলেন, সভায় ব্যবসায়ীরা বলেছেন মসলা আমদানির ক্ষেত্রে তারা ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছেন না। তবে আমরা বিভিন্নভাবে খবর পাচ্ছি ব্যাংকে বাড়তি টাকা দিলেই এলসি খোলা যাচ্ছে। বাড়তি টাকা দিয়ে এলসি খুলতে গেলে কিন্তু পণ্যের দামের ওপর একটা প্রভাব পড়ে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে গেলে এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে। এছাড়া পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে ডিউটি স্ট্রাকচার ফিক্সড করতে হবে।

খাবারে শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত রং মেশানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এটি দ্রুত বন্ধ করতে হবে। এই ক্ষতিকারক রং খেয়ে শুধু দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এমন নয়, আমাদের পর্যটন শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমার পরিচিত অনেক বিদেশির সঙ্গে আমি কথা বলেছি, তারা বাংলাদেশে বেড়াতে আসতে চান কিন্তু তারা এদেশে এসে কি খাবেন সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। কারণ এখানে খাবারে শিল্প কারখানার রং মেশানো হয়। আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাব, এই ক্ষতিকারক রং যেন খাবারে মেশানো না হয়। সে বিষয়ে খুব দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

এমএসি/কেএ