ছাত্র নিপীড়ন বন্ধে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) সকল শিক্ষকদের নিয়ে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১১ জানুয়ারি) এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় আগে থেকে গঠিত অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটিকে ঘটনাটি তদন্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এজন্য কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে চমেক অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার শনিবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে কেন বার বার এমন ঘটনা ঘটছে তা উদঘাটন করা দরকার। ছাত্ররা কিছু স্বীকার করছে না। বিষয়টি তদন্ত করে বের করতে হবে। আর ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এজন্য আমি সকল শিক্ষকদের ইনভলভ করতে চাচ্ছি। এজন্য আজকে সবাইকে নিয়ে বসেছি। আগে থেকে উপাধ্যক্ষের নেতৃত্বে ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবে।

জানা গেছে, গত বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষ থেকে শিবির সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা হলেন, চমেকের ৬২তম ব্যাচের ছাত্র এম এ রাইয়ান, মোবাশ্বির হোসাইন শুভ্র, জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেন। আহতদের মধ্যে জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেনকে চমেক হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রতে (আইসিইউতে) ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আহত এমএ রাইয়ান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং শুভ্র নারায়ণগঞ্জে একজন অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন : চমেকে দুই ছাত্রকে পিটিয়ে আইসিইউয়ে পাঠাল ছাত্রলীগ

ঘটনার দিন রাতে ভুক্তভোগী চার শিক্ষার্থীকে চমেক প্রধান ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলার একটি 'টর্চার সেলে' রাখা হয়। সেখানে অভিযুক্তরা লাঠি এবং প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে ভুক্তভোগীদের বেধড়ক মারধর করে। মারধরের একপর্যায়ে রাইয়ান গুরুতর আহত হন। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার ছাত্রাবাসে নিয়ে আসা হয়। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেনকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে চমেক কর্তৃপক্ষ। এর আগে নির্যাতনের শিকার এম এ রাইয়ান ও মোবাশ্বির হোসাইন শুভ্রকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এবং চমেকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেন চমেকের ৬০তম ব্যাচের ছাত্র অভিজিৎ দাশ ও শামীম, ৫৯ তম ব্যাচের ছাত্র রিয়াজুল ইসলাম জয়, ৬১তম ব্যাচের ইমতিয়াজ হাবীব, ৬২তম ব্যাচের মাহিন আহমেদ, ইব্রাহিম সাকিব, চমন অনয়, সৌরভ দেবনাথ ও জাকির হোসাইন সায়ালসহ ১০ থেকে ১৫ জন। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং চমেক ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ছাত্রলীগের অন্য পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের কয়েকজন চমেক থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কৃত হয়েছেন।

গত ২ ফেব্রুয়ারি মেস ম্যানেজার নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার জেরে নগরের নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ২ নম্বর সড়কে অবস্থিত ‘হাফিজুল্লাহ বশির ও লুৎফুস সালাম’ ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে চমেক কর্তৃপক্ষ। হোস্টেলটি এখনো বন্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুন : আকিবের মাথায় লেখা ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর রাতে এবং ৩০ অক্টোবর দিনে চমেক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ৩০ অক্টোবর প্রতিপক্ষের আঘাতে মারাত্মক আহত হন মাহাদি আকিব। চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, আকিবের মাথার হাড় ভেঙে গেছে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এরপর অপারেশন করে তার মাথার হাড়ের একটা অংশ খুলে পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়। মাথার ব্যান্ডেজে তখন লিখে রাখা হয়, ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’। সে সময় এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়।

এমআর/এসকেডি