পার্ক-খেলার মাঠ থেকে সব নির্মিত ও নির্মাণাধীন বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। তারা বলছে, বর্তমানে গণপরিসরগুলোতে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি দিন দিন বেড়ে চলেছে। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে উন্মুক্ত স্থানগুলোতে সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি দেশের সব উন্মুক্ত স্থানসমূহ চিহ্নিত করে সেগুলোর তালিকা প্রকাশ করা প্রয়োজন।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, বি-স্ক্যান ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ মোট ২৬টি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, মাঠ-পার্কগুলোতে সব শ্রেণির মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে আইনের সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন। গণপরিসরগুলোতে বাণিজ্যিক স্থাপনা বৃদ্ধি পেতে থাকলে জনগণের বিশেষত, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। বিদ্যমান মাঠ-পার্কগুলোর অবকাঠামোগত অবক্ষয় প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে।

প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ বলেন, প্রতিনিয়তই আমরা বায়ু ও শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছি, যা আমাদের ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। একইসাথে খোলা স্থানের ঘাটতির জন্য আমাদের শিশুরা তাদের প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বেলা) রাইসুল হাসান বলেন, পার্ক ও মাঠের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ ও বাণিজ্যিকীকরণ মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। মাঠ-পার্ক রক্ষায় সরকারকে আরও সচেষ্ট হতে হবে।

ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এমএ মান্নান মনির বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়গুলোতে মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সুযোগ পায় না। এলাকার যে বিদ্যালয়গুলোতে মাঠ রয়েছে, তা বিদ্যালয় সময়ের বাইরে এলাকাবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমে এলাকাবাসীর খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরি সম্ভব।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, ঢাকা শহর বসবাসযোগ্যতার দিক থেকে প্রায় তলানিতে। মাঠ-পার্ক-উন্মুক্ত স্থান একটি শহরের বাসযোগ্যতার অন্যতম সূচক। সম্প্রতি অনুমোদিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় শহরের বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর এলাকায় ৫টি বৃহৎ আঞ্চলিক পার্ক, ৫৫টি জলকেন্দ্রিক পার্ক, ১৪টি বৃহৎ ইকোপার্ক এবং ১৪টি অন্যান্য পার্ক ও খেলার মাঠের বাস্তবায়নের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের (নাসফ) সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজধানীর ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। শিশুদের বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত খেলাধুলার সুযোগ না থাকায় শিশুদের মধ্যে কম্পিউটার-মোবাইলসহ বিভিন্ন ডিভাইসের প্রতি আসক্তি বেড়ে গেছে।

এএসএস/এফকে