প্রায় ১ হাজার ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে রাজধানীর মিরপুরের কালশী ফ্লাইওভার এবং ইসিবি স্কয়ার থেকে কালশী হয়ে মিরপুর পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক। সদ্য উদ্বোধন হওয়া এ ফ্লাইওভারের পাশেই রয়েছে কালশী বালুর মাঠ। এই বালুর মাঠটিতে দৃষ্টিনন্দন বিনোদন পার্ক নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ এবং কালশী মোড়ে নির্মিত ফ্লাইওভার উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা শহরে আসলে খেলার মাঠ কিংবা চিত্তবিনোদনের জায়গার অভাব রয়েছে। যেখানে দাঁড়িয়ে আমি ব্ক্তৃতা করছি, এই মাঠ... আমি জানি, একটু ফাঁকা জায়গা দেখলেই অনেকে আসেন, বিল্ডিং বানাবেন, ঘর বানাবেন। অথচ আমাদের ছেলে-মেয়েদের খেলার জায়গা নেই। একটু খোলামেলা জায়গা থাকে না। বয়োবৃদ্ধদের চলাচলের জায়গা থাকে না। আমি আজ ঘোষণা দিচ্ছি, এই কালশী বালুর মাঠে এটা একটা বিনোদন পার্ক হবে।’ 

এসময় মিরপুরসহ আশাপাশের এলাকা থেকে আসা জনসাধারণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে করতালির মাধ্যমে তার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে খেলাধুলার ব্যবস্থা হবে। এই মাঠে শিশুদের জন্য পার্ক করা হবে। যুবকরা যেন ক্রিকেট, ফুটবল বা অন্যান্য খেলাধুলার প্র্যাকটিস করতে পারে, সেভাবেই এই মাঠকে সাজানো হবে। এছাড়া বয়স্করা যাতে করে এখানে হাঁটাচলা করতে পারে তার ব্যবস্থাও করা হবে।’

এখানে যারা আবাসিক প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আবাসিক প্রকল্প করতে চান, তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে। ঢাকা শহরতো এখন আর আগের মতো নেই। ধীরে ধীরে বর্ধিত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো হয়েছে, করা যাবে। কিন্তু মাঠ যেন বাদ থাকবে, এটা যেন বাদ থাকে।’

এর আগে ফলক উন্মোচন করে ফ্লাইওভার ও সড়কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার জনগণের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।

সমাবেশে তিনি মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে গৌরবময় অবদানের কারণে হারুন মোল্লার নামে কালশী ফ্লাইওভারের নামকরণের ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জীব বৈচিত্র্য ও চমৎকার সবুজে ভরা একটি  দেশ। ফুল, ফল, পাখির অত্যন্ত সৌন্দর্যে ভরা এই দেশটিকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলবো। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়বো এবং ঢাকা সিটিও স্মার্ট সিটি হবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেজন্য বহু পদক্ষেপ নিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা হলো এর পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ভালো সংযোগ না থাকা। সরকার রাজধানীর এই অংশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

তিনি বলেন, ইসিবি স্কয়ার থেকে ২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার কালশী ফ্লাইওভার এবং ৩ দশমিক ৭০ কিলোমিটার প্রশস্ত ও ছয় লেনের রাস্তা মিরপুর, ডিওএইচএস, পল্লবী, কালশী, মহাখালী, মানিকদি, মাটিকাটা, ভাষানটেক, বনানী, উত্তরা এবং বিমানবন্দরে যোগাযোগ সহজ করবে। মেট্রোরেলের পর কালশী ফ্লাইওভার ও ছয় লেনের সড়ক চালু হলে ঢাকার যানজট অনেকটাই কমে যাবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা।

মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মনোয়ারুল ইসলাম সরদার কালশী ফ্লাইওভার ও ছয় লেনের সড়ক সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশন দেন। অনুষ্ঠানে কালশী ফ্লাইওভার ও সড়ক প্রকল্পের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।

এসএম