রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে উঠতে শুরু করেছে গ্রীষ্মের রসালো ফল তরমুজ। ফলের দোকানগুলোতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে বড় আকারের তরমুজ। মৌসুমের শুরুর এ তরমুজ ক্রেতাদের আকর্ষণ করলেও দামের কারণে কিনতে গিয়ে ভাবতে হচ্ছে। সাধ্যের মধ্যে না থাকায় কেউ কেউ ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। 

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌসুমের প্রথম তরমুজের এ চালান এসেছে দেশের দুই অঞ্চল থেকে। বাজারে এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় ও বরিশালে চাষ হওয়া তরমুজ মিলছে। পাহাড়ে চাষ হওয়া প্রতি পিস তরমুজের ওজন ৪-৫ কেজি ও বরিশালের তরমুজ ৬-১০ কেজি ওজন হচ্ছে।

তবে ‘লাল টকটকে’ রংয়ের এ তরমুজ নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের পক্ষে কেনা কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ প্রতি কেজি চট্টগ্রামের তরমুজ ৪০-৫০ টাকা ও বরিশালের তরমুজ একদাম ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে ৫ কেজি ওজনের একটি তরমুজ ২৫০ টাকা ও ৮ থেকে শুরু করে ১০ কেজি পর্যন্ত ওজনের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে এতো দামে তরমুজ কেনা অনেক ক্রেতার পক্ষেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তারা।

এদিকে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে তরমুজের চাষ ও সরবরাহ সংশ্লিষ্ট সবকিছুর দাম বেড়েছে। ফলে এর প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েছে।  

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাড্ডা ও রামপুরায় তরমুজের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের দুই অঞ্চল থেকে অর্থাৎ চট্টগ্রাম ও বরিশাল থেকে বেশ ভালো পরিমাণে তরমুজের চালান রাজধানীতে আসছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তরমুজের চালান আরও বেড়ে যাবে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৩-৫ কেজি ওজনের চট্টগ্রামের তরমুজ পাইকারি বাজারে ৩০ টাকা করে ও বরিশালের ৬-১০ কেজি ওজনের তরমুজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ফেব্রুয়ারির হালকা গরমের মধ্যে তরমুজের দামের এমন ঊর্ধ্বগতি, সামনে গরমের সঙ্গে চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে কি না প্রশ্নে কারওয়ান বাজারের তরমুজের আড়তদার মো. সানাউল্লাহ বলেন, বছর দুই আগেও তরমুজ রাজধানীতে আনতে পরিবহন ভাড়া দিতে হতো ২০-২৫ হাজার টাকা। এখন ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ। প্রতি ট্রাকে ২ হাজার থেকে ২২০০ তরমুজ আনা যায়। এসব খরচ হিসাবে নিয়েই তরমুজের দাম নির্ধারণ হয়। এছাড়া কৃষকের কাছ থেকেও কেজি হিসেবে তরমুজ কিনতে হয়। 

তরমুজের দাম নিয়ে রামপুরা এলাকার খুচরা বিক্রেতা মো. ফারুক বলেন, পিস আর কেজি যেটাই হোক না কেন সব মিলিয়ে আমাদের তো বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। যেভাবেই কিনে আনা হউক দাম তো আগের থেকে বেড়েছে। বাজারে সবেমাত্র তরমুজ এসেছে, তেমন কেনাবেচা নেই। কেনাবেচা বাড়লে দাম হয়তো কমে যাবে।

অন্যদিকে পাইকারি বাজারে চট্টগ্রামের তরমুজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও, ২০ টাকা বেশি দরে ২-৫ কেজি ওজনের ছোট আকারের তরমুজ বাড্ডার ফলের দোকান ও ফুটপাতের ভাসমান দোকানে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে বাড্ডা এলাকার মৌসুমি তরমুজ বিক্রেতা ইসমাইল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালো জিনিসের দাম একটু বেশিই হয়। আমাদের তরমুজ ১ নম্বর। মিষ্টি না হলে জরিমানা দেবো। 

এদিকে ক্রেতারা বলছেন সামনে রোজার মাস, সে সঙ্গে গরমও বাড়বে। তখন তীব্র গরমে মানুষ ইফতারের সময় তরমুজের জুস পান কিংবা তরমুজ খেতে চাইবে। এখনি ৫০ টাকা কেজি, তাহলে বোঝা যায় রোজায় তারা আরো দাম বাড়িয়ে দেবে। গরমের তীব্রতা যতো বাড়বে ততোই ঢাকার ব্যবসায়ীরা তরমুজের দাম বাড়িয়ে যাবেন। কম দামে তরমুজ কিনে আনলেও বেশি লাভের আশায় তারা  দাম বাড়াবে, কারণ তখন মানুষের চাহিদা বাড়বে।  

রাজধানীর বাড্ডা গুদারাঘাট এলাকা থেকে ৭ কেজি ওজনের একটি তরমুজ কিনতে চেয়েছিলেন ফুচকা বিক্রেতা মো. সিদ্দিক। কিন্তু ৫০ টাকা কেজি দরে দাম হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তরমুজটি তিনতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, বেশি দিন আগের কথা না, ৩-৪ বছর আগেও ১০০ টাকা দিয়ে বড় তরমুজ বাসায় নেওয়া যেতো। তখন কোনো কেজি দর ছিলো না। এখনও গরমের তীব্রতা শুরু হয়নি তাতেই কেজি চাইছে ৫০ টাকা। সামনে যে দাম কোথায় যাবে! আমরা আর তরমুজ কিনে খেতে পারব না।

দাম বেশি হওয়ায় গুদারাঘাট থেকে ২ কেজি ৬০০ গ্রাম ওজনের একটি তরমুজ কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইদ্রিস মিয়া। তিনি বলেন, বড় আকারের একটি তরমুজের দাম ৪০০-৫০০ টাকা। এটা কোনো কথা হলো? নিম্ন বা মধ্যম আয়ের মানুষের পক্ষ এতো দাম দিয়ে তরমুজ কেনা সম্ভব? আমি বুঝি না, এতো দামের তরমুজ রাস্তায় কেন বিক্রি হবে, এই ফল এখন বিক্রি হবে সুপারশপে। কেননা উচ্চ আয়ের মানুষ ছাড়া তো এখন আর কেউ তরমুজ কিনতে পারবে না। আর রাস্তার ক্রেতারা তো সবাই নিম্নআয়ের মানুষ। 

এমএসি/জেডএস