অক্সিজেন প্ল্যান্ট পরিচালনায় যে পরিমাণ ইঞ্জিনিয়ার বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দরকার তার কিছুই ছিল না চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিকো অক্সিজেন লিমিটেডে। দুজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং মানবিক বিভাগ থেকে পাস করা একজন সুপারভাইজার প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন বলে জানিয়েছেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মামুন।

সোমবার (৬ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে 'চট্টগ্রাম জেলার ভারী ও মাঝারি শিল্পপ্রবণ এলাকায় দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন' করতে জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ওই সভায় সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের নানা অনিয়মের বিষয় ওঠে আসে। সভায় উপস্থিত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নানা প্রশ্নের জবাব দেয় এমডি মো. মামুন।

তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে তার বাবা আহমদ শফী কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে যাবতীয় নিয়মকানুন মেনে এটি পরিচালনা করা হয়। এখানে শিল্পকারখানায় ব্যবহারের অক্সিজেন প্রস্তুত করা হয়। দুর্ঘটনার সময় শ্রমিক-কর্মকর্তা মিলে ১৯ জন কর্মরত ছিলেন। তবে এর পাশাপাশি অনেক পথচারী আহত হয়।

জেলা প্রশাসকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারখানার অপারেটররা ডিপ্লোমা হোল্ডার। উনাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। ২৭ বছর ধরে তারা কারখানাটি চালাচ্ছেন। শনিবারের দুর্ঘটনায় কারও হাত নেই। কেন হয়েছে জানি না। আল্লাহ ভালো জানেন।

সভায় চট্টগ্রামের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তরের প্রধান আবদুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত বলেন, সীতাকুণ্ডে ৫৫০টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে সীমা অক্সিজেন একটি। বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের পর আমরা প্রতিষ্ঠানটিতে পরিদর্শন করে বেশ কিছু সমস্যা পেয়েছিলাম। পরে মৌখিকভাবে তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়। এমনকি চিঠিও দেয়া হয়। তারা তখন ৩ মাসের সময় নেয়। কিছু সমস্যার সমাধানও করে। একই মালিকের আরেকটি প্রতিষ্ঠান অটো রি-রোলিং কারখানায়ও বেশ কিছু সমস্যা পাওয়া গিয়েছিল। পরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তর বাদি হয়ে চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক বলেন, ৮ মাস আগে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস সতর্ক হয়ে যায়। সেটির ধারবাহিকতায় বিভিন্ন কারখানায় পরিদর্শন করা হয়। ২০২২ সালে সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়। কারখানাটিতে ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল না। সেটি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল।

জানা গেছে, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত সাতজন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে। কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড), ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধি, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রতিনিধিকে।

এমআর/এমজে