২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায় ভবন নির্মাণ হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার। কিন্তু এসব ভবনের সিংহভাগেরই অনুমোদন নেই বিভিন্ন শর্তের দিক থেকে। এই বিশাল সংখ্যক অনুমোদনহীন ভবন নিয়ে কী করা যায়, এমন ভাবনা থেকে নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

রাজউকের আওতাধীন এলাকায় এসব অনুমোদনহীন ভবন জরিমানা দিয়ে বৈধ করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। উচ্চহারে জরিমানা নিয়ে এসব ভবন বৈধ করার সুপারিশ করা হয়েছে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) ২০২২-২০৩৫।

ড্যাপের আওতায় বিধিমালা প্রণয়নে ১২ সদস্যের একটি কমিট গঠন করা হয়েছে বলে রাজউক সূত্রে জানা গেছে। কমিটি গঠন করে একটি অফিস আদেশও জারি করেছে রাজউক। সেখানে বলা হয়েছে, ড্যাপের নতুন সুপারিশ অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া নির্মাণ করা ভবন বা ইমারত বৈধ করার বিষয় খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করবে এই কমিটি।

এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপপেক্ষর নগর পরিকল্পনাবিদ এবং ডিটেল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী যদি কোনো অনুমোদনহীন ভবন অবকাঠামোগতভাবে নিরাপদ হয়, তখন তা জরিমানা দিয়ে বৈধতা পাওয়ার বিধান আছে। অর্থাৎ কোনো ভবন যদি রাজউকের অনুমোদন না নিয়ে থাকে তবে যদি ভবনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক থাকে সেক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে জরিমানা করার বিধান রয়েছে। এই অবস্থায় ড্যাপের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ থাকলে কেবল সেই ভবনকে অনুমোদন দেওয়া হবে। অন্যথায় অনুমোদন পাবে না। তবে সরকারি জমি, নদী খাল, দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা কখনই অনুমোদন পাবে না, সেটির যতই নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকুক না কেন। এসব বিষয়েই মূলত বিধিমালা জারি করা হবে।

অনুমোদনহীন ভবন বৈধ করতে ড্যাপের আওতায় বিধিমালা প্রণয়নে গঠিত কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বা অনুমোদনের সময় শর্ত ভেঙে নির্মিত ইমারতগুলোকে বৈধ করার ক্ষেত্রে আবেদন পদ্ধতি, ফি ও জরিমানা নির্ধারণ পদ্ধতিসংক্রান্ত খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন। ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৮ (ইমারত বিধিমালা) অনুযায়ী, যেসব স্থাপনা অননুমোদিত অথবা বিধিমালার বা অনুমোদনের শর্ত না মেনে নির্মিত হয়েছে সরেজমিনে পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রণয়ন। অবশ্যই সেটি বিদ্যমান ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ এবং বিল্ডিং কোড পর্যালোচনা করে তৈরির জন্য বলা হয়েছে। 

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ১২ সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগ-১-এর অতিরিক্ত সচিবকে। সদস্য হিসেবে আছেন রাজউকের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা দুই সদস্য।

এছাড়া অন্যান্য সদস্য হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন), গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখা-৩-এর উপসচিব, রাজউকের নগর স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ (বাস্তবায়ন), অথরাইজড অফিসার (সংশ্লিষ্ট জোন) এবং নগর পরিকল্পনাবিদ (পরিকল্পনা প্রণয়ন)।

এএসএস/জেডএস