আগুনে পুড়ে যাওয়া আইসিইউয়ের একাংশ

যখন আগুন লাগে, ডাক্তার-নার্স কিংবা ওয়ার্ড বয় কেউ এগিয়ে আসেনি। আমরা যারা রোগীর স্বজন ছিলাম, নিজেরাই রোগীদের স্যালাইনপত্র খুলে কোলে করে বের করে নিয়ে আসি। 

ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউয়ে থাকা মাহবুব মণ্ডল নামে এক রোগীর ছেলে ইসলামুল হক। বুধবার সকালে এই আইসিইউয়েই আগুন লাগার পর তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, তবে আগুনে তাদের মৃত্যু হয়নি।      

আগুন লাগার একেবারে শুরুর দিকের চিত্র পাওয়া গেল ইসলামুলের কথায়। তিনি বলেন, ১২ নম্বর বেডের রোগির সামনে থাকা একটি পাইপ থেকে হঠাৎ সিগারেটের ধোঁয়ার মতো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল। রোগীর সাথে থাকা একজন অভিভাবক হাত দিয়েই ওই ধোঁয়া নেভানোর চেষ্টা করছিলেন। তখন হঠাৎ করেই আগুন জ্বলে উঠে সেন্ট্রাল এসিতে চলে যায় এবং মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে যায়।

এর পরের মুহূর্তগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সবাই ছুটোছুটি শুরু করল। ডাক্তার-নার্স, ওয়ার্ড বয় সবাই বের হয়ে যায়। যেসব রোগীর স্বজন ভেতরে ছিল তারাই তাদের রোগীদের কোলে এবং কাঁধে করে বের করেন। পাশে কোনো হুইল চেয়ার বা ট্রলি ছিল না।

আমরা রোগীদের নিয়ে বের হয়ে পাশের সিসিইউতে যাই। তবে সেখানেও কোনো ডাক্তার ছিল না। সবাই রোগীদের নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে। আমার মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে আমি আইসিইউয়ের খোঁজে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলি। তারা বলেছে যে, বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে দেবে, কিন্তু দেয়নি।

স্বজন হারানোর আহাজারি

আগুন লাগার পর আইসিইউ থেকে রোগীদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার পর যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের একজন কাজী গোলাম মোস্তফা। গোলাম মোস্তফার ছেলে মারুফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগুনের সময় একটা লোকও রোগিদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। আমরা যারা বাইরে ছিলাম তাদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঢামেকের কর্মচারীদের নিজে নিজে আগুন নেভানোর কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসার পর তারা ভেতরে ঢুকেছে।

আগুনের বিষয়ে ঢামেক পরিচালক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে চলে আসি। পরে সবাই মিলে সব রোগীকে অন্য আইসিউতে স্থানান্তর করি। ফায়ার সার্ভিসসহ সবাই মিলে দ্রুততার সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। 

এআর/জেইউ/এনএফ