গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগের অনুসন্ধান কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার মোজাম্মেল হক খান।

রোববার (১২ মার্চ) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা জানিয়েছেন। 
 
দুদক কমিশনার বলেন, দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে দুর্নীতি দূর করা। আমরা যখন তথ্য-প্রমাণসহ দুর্নীতির অভিযোগ পাই, তখন অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করি। গ্রামীন টেলিকমের দুর্নীতির অভিযোগটি তারই ধারাবাহিকতায় অনুসন্ধান শুরু হয়, যা এখনো চলছে। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কে জড়িত, সেটা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য নয়। আমরা বস্তুনিষ্টভাবেই অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করছি। এখনও অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। অনুসন্ধান শেষে যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে, সেটা আমরা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য নিতে তাকে দুদকে ডাকা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে, এ কথা সত্য। তবে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আমাদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র যাচাই-বাছাই করতে হয়। অনুসন্ধান পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা যদি প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য দেবেন। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান কাজ শেষ হবে। 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠানো হয়। ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই ২০২২ সালের ২৮ জুলাই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানান দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন

অভিযোগগুলো হলো—অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন, শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ করা সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ। এছাড়া কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ।

অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দুদক। কমিটিতে দুদকের তৎকালীন পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন— দুদক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও নূরে আলম সিদ্দিকী।

ইতোমধ্যে অভিযোগ অনুসন্ধানে গত বছরের আগস্টের বিভিন্ন সময়ে এমডিসহ ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। অনুসন্ধান পর্যায়ে বারবার নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ আসে।

গত বছরের ২৩ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগতভাবে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

এ সময় গ্রামীণ টেলিকমের এমডি বলেন, বোর্ডের মাধ্যমে সব সিদ্ধান্ত হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে কোনো কিছুর সঙ্গে ড. ইউনূস জড়িত নন। এছাড়া নিয়ম মেনেই শ্রমিকদের অর্থ ছাড় করা হয়েছে।

আরএম/এসএম