পানি ও বর্জ্য পানি শোধনকারী জাপানি কোম্পানি গোশু কোহসান কোং লিমিটেড বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে। গত শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের সিক্স সিজনস হোটেলে এক জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের যাত্রা শুরু করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার।

শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন গোশু কোহসান লিমিটেডের জেনারেল ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যান ড. হিসাতো তাকেদা। তিনি বলেন, গোশু কোহসান বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করছে। এখানে ব্যবসা শুরুর মাধ্যমে আমরা যেসব দেশে কাজ করি তাদের সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয়ে বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জাপানি কোম্পানিগুলোর সাথে, অন্যান্য বিদেশি কোম্পানিগুলোও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পানি শোধনের ক্ষেত্রে গোশু কোহসান টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হব। একটি টেকসই ও দক্ষ পানি পরিশোধন কাঠামো গঠনের জন্য, আমরা গত মাসে কাজ শুরু করেছি।

তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, আমরা পানি ও বর্জ্য পানি শোধনাগার নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পানি ও পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখব। আমরা আপনাদের দিকনির্দেশনা ও সমর্থনকে গভীরভাবে সম্মান এবং প্রশংসা করি।

প্রধান অতিথি উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার পানির গুরুত্ব বর্ণনা করে তার বক্তব্য শুরু করেন, পানি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ। গৃহস্থালির কাজ থেকে শুরু করে শিল্প, বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন কাজে পানি ব্যবহার করা হয়। পরে তা দূষিত ও পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই দেশটি আসন্ন দশকগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত হবে এমন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। পানির সর্বোত্তম ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তাই টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প ও গৃহস্থালি পর্যায়ে প্রত্যেকেরই ভূমিকা রয়েছে। দক্ষ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট শিল্পের বর্জ্যপানি থেকে জীবাণু ও বিষাক্ত পদার্থ নির্মূল করে পানির পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। এটা করা না হলে নদী ও মহাসাগর দূষিত হবে এবং জীবন বিপন্ন হবে।

বক্তৃতার শেষভাগে গোশু কোহসান বাংলাদেশের উদ্বোধনের ঘোষণা দেন উপমন্ত্রী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর প্রধান ও বিশেষ অতিথিদের ক্রেস্ট প্রদান করা হয় এবং এমপি হাবিবুন কোম্পানির উদ্বোধন উপলক্ষে কেক কাটেন। উপস্থিত বিদেশি অতিথিদের সামনে বাংলাদেশের বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাউল সঙ্গীতকে তুলে ধরতে এরপর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজ।

গোশু কোহসান (বাংলাদেশ) কোং লিমিটেড ‘গোশু কোহসান (ভিয়েতনাম) কোং লিমিটেড’-এর একটি স্থানীয় শাখা সংস্থা। তারা বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য পানি শোধনাগার ও বর্জ্য শোধনাগার কেন্দ্র স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। ৪০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গোশু কোহসান (ভিয়েতনাম) কোং লিমিটেড এবং গোশু কোহসান কোং লিমিটেড ‘বর্জ্য জল’ খাতে একটি বিখ্যাত নাম। শিল্প পার্ক, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং কারখানায় ইটিপি (এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) এবং ডব্লিউটিপি (ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) স্থাপন করে তারা ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, লাওস এবং কম্বোডিয়ার অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাহী সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ এরফান শরীফ এবং ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে আরও মহিমান্বিত করে। তারা উভয়েই গোশু কোহসান বাংলাদেশ কোং লিমিটেডের সাফল্য কামনা করেন।

একাধিক জাপানি বিনিয়োগকারী, বিশিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, চেম্বার অব কমার্সগুলোর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, শিল্প ও ব্যবসায়িক সমিতির প্রতিনিধিগণ (স্থানীয় এবং জাপানিজ) এবং জাপানি প্রবাসীরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সফলভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশি কনসাল্টেন্সি ফার্ম ইয়ং কনসাল্টেন্টসের পাবলিক রিলেশনস ও কমিউনিকেশন টিম।