বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব দেশ পাকিস্তানকে সহায়তা বা দেশটির পক্ষ নিয়েছিল, তাদের অনেকের অবস্থানগত পরিবর্তন হয়েছে। ওই সময়ের ভুল সিদ্ধান্তের কথা কিছু দেশের কর্তা ব্যক্তিরা বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতনদের কাছে স্বীকার করলেও, তারা জনসম্মুখে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

সোমবার (২০ মার্চ) ‘বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে গণহত্যার স্বীকৃতি’ শীর্ষক বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বর্তমান বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র আছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। যারা আমাদের স্বকীয়ভাবে সমর্থন দেয়নি অথবা প্রচ্ছন্ন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে সহায়তা করেছে, তাদের অনেকের অবস্থানগত পরিবর্তন হয়েছে। তারা প্রাইভেট মিটিংয়ে আমাদের বলেন, এ কাজগুলো ঠিক হয়নি, ভুল ছিল। কিন্তু পাবলিকলি তারা বলেন না।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সংঘটিত নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সে সময়কার বিরোধীদের পাশে চান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করব, সেসব রাষ্ট্র আমাদের সহযোগিতা করবে। পরিবারগুলোকে সহযোগিতা করবে। সে সময়ে তাদের সিদ্ধান্তগুলো তাদের অগ্রজরা বা রাজনীতিকরা সঠিক নেননি অথবা ভুল করেছেন, এটা তারা উপলব্ধি করবেন।

গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি বিষয়টি ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা পাবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে শাহরিয়ার আলম বলেন, সংসদে গণহত্যার বিষয়টি স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে গত পাঁচ বছরে আমি দাবি করতে পারি এটার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সবশেষ ভারত সফরে গণহত্যার বিষয়টি আমরা যৌথ বিবৃতিতে এনেছি।

তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমরা আরও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাব এবং পর্যায়ক্রমে এটার একটা বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা হবে। এ বিষয়টি আমাদের বলাটা জরুরি। এজন্য মিডিয়ার সহযোগিতা, বাংলাদেশি ডায়াসপোরার সহযোগিতা প্রয়োজন।

জাতিসংঘ থেকে গণহত্যা স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি বেশ জটিল বলে উল্লেখ করেন শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, জাতিসংঘের একটা গণহত্যা দিবস আছে। সুতরাং এটাকে গণহত্যা দিবস করা যাবে না। জাতিসংঘ নতুন কোনো উইংয়ের গণহত্যা এমনকি রুয়ান্ডার গণহত্যা নিয়ে মহাসচিব ব্যর্থ হয়েছেন, ঘটনা বিশ্লেষণ করলে এ রকম দেখা যায়।

তিনি বলেন, তারা আর্মেনিয়ার গণহত্যার পর আর কোনো গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেয়নি। সে জায়গা থেকে আমাদের হাতের কাছে যেটা আছে রোহিঙ্গা জেনোসাইড সেখানে যে কয়েকটি রাষ্ট্র বলেছে, রোহিঙ্গাদেরটা গণহত্যা। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাদের বলেছি, তাহলে বাংলাদেশেরটা কেন গণহত্যা হবে না।

কবে নাগাদ বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতি পেতে পারে-জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, টাইম ফ্রেম বলাটা কষ্টকর। তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটাকে বিশ্বের বেশিরভাগের কাছে অফিসিয়াল স্বীকৃতি না পেলেও মানুষের কাছ থেকে পাব, এটা বলতে পারি।

বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজের মূল বক্তা ছিলেন এশিয়া জাস্টিস অ্যান্ড রাইটসের কো-ফাউন্ডার ব্যারিস্টার প্যাট্রিক বার্জেস। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে আমি প্রথম আসি। তখনো বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়ে আমি অবহিত ছিলাম না। তবে কী ঘটনা ঘটেছিল আমি পরে সেটা জানার চেষ্টা করি এবং জানতে পারি।

প্যাট্রিক বলেন, রুয়ান্ডা, আর্মেনিয়া, পূর্ব তিমুরসহ অনেক দেশেই গণহত্যা হয়েছে। বাংলাদেশও গণহত্যা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন গণহত্যা না হয়, সেজন্য জবাবদিহিতা ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও মানবিক কারণে শরণার্থীদের আশ্রয় ও সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এশিয়া জাস্টিস অ্যান্ড রাইটসও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তার চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে প্রকৃত ঘটনা আসিয়ানকেও অবহিত করার চেষ্টা করছি।

অনুষ্ঠানে ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর মাশফি বিনতে শামস বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আমাদের অনেক রক্তের মূল্য দিতে হয়েছে। সেই সময়ে এখানে ব্যাপক গণহত্যা হয়েছে। তবে বিশ্ব থেকে সেই স্বীকৃতি থেকে আসেনি।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।

এনআই/জেডএস