ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রোবোটিক্স এবং মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর  ড. লাফিফা জামাল বলেছেন, প্রযুক্তি এখন মুষ্টিমেয় জনগোষ্ঠীর বিষয় নয়। প্রযুক্তিতে অংশগ্রহণ বেড়েছে। বিজ্ঞান ও পরিসংখ্যানের মতো বিষয়ের পড়াশোনায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে, তবে প্রযুক্তিগত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগের ক্ষেত্রে এখনও পারিবারিক বৈষম্য আছে। 

আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

সেগুনবাগিচায় সংগঠনের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা অর্জনে তথ্য ও প্রযুক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদ সভাপতি  ডা. ফওজিয়া মোসলেম।

লাফিফা জামাল আরও বলেন, বিজ্ঞানে বায়োলজির মতো শিক্ষায় নারীদের বেশি দেখা যায়, প্রকৌশল শিক্ষায় মেয়েদের উপস্থিতি কম। অনলাইন অ্যাকসেস পাওয়ার ক্ষেত্রে জেন্ডার গ্যাপ আছে ২৯ শতাংশ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর সামিনা চৌধুরী বলেন, কোভিডকালে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে চার লাখ নারীকে সেবা দিতে সক্ষম হয়েছি। তরুণদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের কাজে লাগাতে হবে।

বেসিসের সাবেক সভাপতি ও  ডাটা সফট-এর প্রতিষ্ঠাতা এ কে মাহবুব জামান বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং কোভিড পরিস্থিতি তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। তথ্য-প্রযুক্তিতে কাজের ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আগে কম থাকলেও এখন বেড়েছে।  

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. নোভা আহমেদ বলেন, এখনও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা গ্রহণে মেয়েদের উপস্থিতি কম। এর কারণ সামাজিক বাধা, প্রাতিষ্ঠানিক বাধা, নীতিগত পরিবর্তনের অভাব। সাইবার অভিযোগ ও সমস্যা সমাধানে থাকা জ্ঞানের ঘাটতি দূর করতে কাজ করতে হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধের জন্য নিজেদের সচেতনভাবে মোকাবিলা করতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে প্রযুক্তি ব্যবহারের মূল ধারার সাথে যুক্ত করতে হবে।

ওয়েব ডেভেলপার আ. স. ম. হাবিবুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে লিঙ্গগত পরিচিতির চেয়ে কাজের দক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনলাইনে কাজের প্রসারের কারণে নারীদের বাইরে যাওয়ার বাধা নেই। নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ আছে কিন্তু তাদের উপস্থিতি কম। কেন নারীরা এখানে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন তা আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে। গণনারীর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
 
সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে। চাহিদার সাথে সাথে নারী আন্দোলনের স্লোগান বদলায়, করণীয় বদলায়। আজ নারীরা এগিয়ে গেলেও অনেক সমস্যা আছে।  মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের জীবনের নতুন দরজা উন্মোচিত হয়েছে। যখন কোনো জিনিস পিছনে টানে তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হয়। ধর্মকে নারীর প্রতি বৈষম্যের টুল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ জায়গায় করণীয় আছে। নারীর আন্দোলনের মূল কেন্দ্র নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে যে অমিত সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।

মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী নাবিল, আইটি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুর রহমান, তিলপা পাড়া কমিটির সদস্য মো. ফাহিম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী স্বর্ণ ও ইফতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইন্স সোসাইটির সহ-সভাপতি সানজিদা আফরিন, রিফা তাসনিয়া, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ফাহমিদা নাজনীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইরি জামান নিশু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক সংগীতা আহমেদ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ড. সিউতি সবুর।

জেইউ/এনএফ