নগরবাসীকে সচেতন করা হচ্ছে

চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতেও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে চাপ বাড়ছে হাসপাতালের আইসিইউতে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোভিড ইউনিটের প্রধান ডা. মো. আবদুর রব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের ১০টি আইসিইউতেই রোগী রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে রোগী থাকত তিন থেকে চারজন। এখন ভর্তি রোগী রয়েছে ৪৬ জন।

তিনি বলেন, গত তিন-চারদিন ধরে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন কোভিড রোগী ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই মধ্যবয়সী। আক্রান্ত হলেই রোগীদের অবস্থা খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বর্তমানের ৪০ শতাংশও ছিল না। সে সময় আমাদের করোনা ওয়ার্ডে রোগী থাকত ২০ থেকে ২২ জন। আর এখন ৪৬ জন। আক্রান্তদের তীব্র মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, ডায়রিয়া ও চোখে ব্যথার মতো উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ হাজার ২৮ জন, মারা গেছেন ৩৮৩ জন। মার্চের ১ তারিখ থেকে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৯ জন। আর পুরো ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন মাত্র ১ হাজার ৯৭২ জন। গত তিন দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনগুলোর তুলনায় বেশি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৬৫৮টি নমুনা পরীক্ষায় ১৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। বুধবার ২ হাজার ১৬৪ নমুনা পরীক্ষা করে ১৮৩ জনের করোনা ধরা পড়ে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষের অসচেতনতার কারণে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আবার ভ্যাকসিন নিয়ে কনফিডেন্ট হয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেও করোনা বাড়ছে। গত গ্রীষ্মে রোগী বেড়েছিল। ভাইরাল রোগগুলো গরমের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। মূলত স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে চরম অনীহার কারণে করোনা রোগী বাড়ছে। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। আইসোলেশন মানা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আইসিইউতে রোগীর চাপ বেড়েছে। হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা দিয়ে কোভিডের চিকিৎসা হয়। এর ওপরই জোর দেওয়া হচ্ছে। গত বছর প্রাইভেট হাসপাতালগুলো অসহযোগিতা করলেও এবার তারা সহযোগিতা করেছে। সরকারি হাসপাতালে যে শয্যাগুলো আছে, তা কোভিডের জন্য তৈরি করা হয়েছে। জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিটও (পুরাতন হলিক্রিসেন্ট) প্রস্তুত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৫০ থেকে ২০০ রোগী রাখতে পারব। এখন রোগী আছে ৫০ জনের মতো। আমাদের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তাদের আক্রান্তের হার ২৪ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। যাদের আক্রান্তের হার ২০ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী আক্রান্তদের হার ১৯ শতাংশ। আর ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের আক্রান্তের হার ১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর ষাটোর্ধ্বদের আক্রান্তের হার ১৩ শতাংশ। শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের আক্রান্তের হার ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ। এ বিষয়ে  সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, তরুণদের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা বেশি। যে কারণে তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইদানীং তরুণদের মাঝে পার্টি, উৎসব ও আড্ডাবাজি বেড়ে গেছে। তাছাড়া মাস্ক পরার প্রবণতা কম। যে কারণে তরুণরা বেশি সংখ্যক আক্রান্ত হচ্ছে। অসচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে মার্চে এসে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অংশগ্রহণে করোনা বাড়তে পারে।

করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়লে ফিল্ড হাসপাতাল আবার চালু করা হবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়, সরকার চাইলে ফিল্ড হাসপাতাল আবার চালু করা হবে। ২৪ ঘণ্টায় ফিল্ড হাসপাতাল চালু করা সম্ভব। 

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও চট্টগ্রামবাসী এখনো স্বাস্থ্যবিধি তেমনভাবে মানছে না। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষকে সচেতন করতে এবং স্বাস্থ্যবিধির জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হচ্ছে। চারদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। যাদের মাস্ক নেই তাদেরকে সতর্ক করার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। রোববার থেকে কেউ মাস্ক ছাড়া বের হলে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

কেএম/আরএইচ/এমএমজে