চট্টগ্রাম কাস্টমসে ডাকের চালানে অস্ত্র ও গুলি আসার ঘটনা দায়ের হওয়া একটি মামলায় সংশ্লিষ্ট আইনে তিনটি পৃথক চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। পরে আদালত তিনটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। এতে করে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি পায় অভিযুক্ত দুইজন।

খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- প্রাপক মজুমদার কামরুল হাসান ও প্রেরক রাজীব বড়ুয়া। কামরুল হাসান মজুমদার চট্টগ্রাম আয়কর কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী পদে কর্মরত এবং তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে। তার বাবার নাম গোলাম ছত্তার মজুমদার। এছাড়া রাজীব বড়ুয়ার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নে। তার বাবার নাম ফনি ভূষণ বড়ুয়া।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা দুইটি চূড়ান্ত প্রতিবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত মামলা দুইটি থেকে আসামিদের খালাস দেয়। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একটি মামলা খারিজ করে দেয়। 

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুর রশীদ। তিনি বলেন, একটি মামলার ভিত্তিতে তিনটি পৃথক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। কাস্টমস আইনেরটা আগে খালাস হয়েছে। অস্ত্র এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনেরটা আজ (মঙ্গলবার) খারিজ হয়েছে। 

আদালত সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জ্যোৎস্না আক্তার বন্দরের প্রধান ডাকঘরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওইসময় ইতালির রোম থেকে আসা একটি চালানে কায়িক পরীক্ষা শেষে ২টি ৮এমএম পিস্তল, ২টি সদৃশ খেলনা পিস্তল ও ৬০টি কার্তুজ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে কাস্টমস হাউসের এআইআর শাখার ডেপুটি কমিশনার শরফুদ্দিন মিঞার নির্দেশে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। 

আলোচিত মামলায় চালানটির প্রাপক মজুমদার কামরুল হাসানকে প্রধান এবং প্রেরক রাজীব বড়ুয়াকে আসামি করা হয়। এতে দুই আসামির বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে পার্সেলের মাধ্যমে গৃহস্থালি সামগ্রীর সঙ্গে অসত্য ঘোষণায় চোরাচালানের মাধ্যমে আগ্নেয়াস্ত্র আনার অভিযোগ আনা হয়। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন, কাস্টমস আইন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখ করা হয়।

এদিকে মামলা দায়েরের পরপরই ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে মজুমদার কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৩ মাস কারাগারে থাকার পর ওই বছরের ২৪ মে জামিন পান তিনি। এরইমধ্যে বন্দর থানায় দায়ের হওয়া মামলাটি তদন্ত করতে থাকেন ওই থানায় কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল সরোয়ার। তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর তিনি আদালতে পৃথক আইনে তিনটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। 

সেখানে উল্লেখ করা হয় বন্দরের প্রধান ডাকঘরে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গুলি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) চট্টগ্রাম এবং সিআইডি ঢাকা মহাখালী কার্যালয়ের ফরেনসিক ল্যাবের ব্যালেস্টিক শাখায় পরীক্ষা করানো হয়। সেখান থেকে তারা মতামত দেন অস্ত্রগুলো দিয়ে ফায়ার করা হলে কেবলমাত্র শব্দ সৃষ্টি হয়। এগুলোর ব্যারেলে প্রতিবন্ধকতা থাকায় কোনো প্রকার বুলেট বা পিলেট বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ হিসেবে এগুলো আগ্নেয়াস্ত্র নয় বলে প্রতীয়মান হয়। 

এছাড়া জব্দ হওয়া কার্তুজগুলো প্রজেক্টাইলবিহীন, যাতে কেবলমাত্র শব্দ সৃষ্টি হয়। যেহেতু কার্তুজগুলোতে কোনো বুলেট বা পিলেট নেই সেহেতু এগুলো আগ্নেয়াস্ত্রের নয়। আবার জব্দ হওয়া দুইটি অস্ত্রের ব্যারেলের উপরিভাগে দুটি ছিদ্র রয়েছে, যার মাধ্যমে ফায়ার করলে প্রচণ্ড ধোঁয়া ও শব্দ সৃষ্টি হয় মাত্র। এসব অস্ত্র-গুলি সিনেমা, মুভি, থিয়েটার, দৌড়-সাঁতার প্রতিযোগিতা শুটিং প্র্যাকটিসের কাজে ব্যবহার করা হয়।

সার্বিক তদন্ত শেষে বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফয়সাল সরোয়ার দুই আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করে তিনটি পৃথক চূড়ান্ত প্রতিবেদন (তথ্যগত ভুল) আদালতে জমা দেন।

এমআর/এফকে