অনাহারীর মুখে খাবার তুলে দিতে সর্বদা প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে বিদ্যানন্দ। মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে হাজার হাজার সুবিধা বঞ্চিতদের মুখে মানসম্পন্ন খাবার তুলে দেয় সংস্থাটি। এছাড়া ধর্মীয় উৎসবেও সুবিধা বঞ্চিতদের পাশে এসে দাঁড়ায় তারা। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের রমজানে দৈনিক ১০ হাজার মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করবে বিদ্যানন্দ।

বিদ্যানন্দ সূত্রে জানা যায়, এই বছর সংগঠনটি প্রায় ৩ লাখ মানুষের মাঝে বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ করবে। বিনামূল্যের ইফতারের থাকবে রান্না করা ও শুকনো খাবার। এছাড়া প্রতি দিন প্রায় ৫০০ মানুষের মাঝে সাহরি বিতরণ করবেন তারা। এছাড়া উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোজার মাসব্যাপী দেড় হাজার পরিবারের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করবে বিদ্যানন্দ। 

বেশ কয়েকটি ধাপে সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে ইফতার ও সাহরি বিতরণ করবে বিদ্যানন্দ। এর মধ্যে থাকবে বিদ্যানন্দের ইফতার গাড়ি, ঢাকা মহানগর পুলিশের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ ইফতার গাড়ি, বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক ইফতার টিম ও কারওয়ান বাজারে উন্মুক্ত ইফতার আয়োজন। প্রতিদিন এভাবে সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে ইফতার বিতরণ করবে সংগঠনটি।

বিদ্যানন্দের ইফতার ও সাহরিতে যে আয়োজন থাকবে

সংগঠনটি কমিউনিকেশনস বিভাগ জানায়, বিদ্যানন্দের ইফতার আয়োজনে থাকবে দুই ধরনের খাবার। শুধুমাত্র ঢাকায় ইফতারে রান্না করা খাবার বিতরণ করবেন তারা। ঢাকায় রান্না করা খাবারসহ ছোলা ও মুড়ি ইফতারে হিসবে বিতরণ করা হবে। রান্না করা খাবারে থাকবে তেহারি। এছাড়া প্রতিদিন রাজধানীতে ৫০০ জন মানুষের মাঝে যে সাহরি বিতরণ করা হবে সেখানেও তেহারি থাকবে। এছাড়া উপকূল অঞ্চলের দেড় হাজার পরিবারকে প্রতিদিন চাল, ডাল ও তেলসহ নানা ধরনের ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হবে।

বিদ্যানন্দের ইফতার গাড়ি

বিদ্যানন্দ জানায়, প্রতি বছরের মতো এবারও তাদের একটি ইফতার গাড়ি প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ বস্তি এলাকায় যাবে। ইফতার গাড়ি থেকে কয়েক হাজার মানুষকে প্রতিদিন ইফতার বিতরণ করা হবে। বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকদের দল এই ইফতার গাড়ি নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যাবেন।

এই গাড়ি থেকে সুবিধা বঞ্চিতরা বিনামূল্যে ইফতার নিতে পারবেন। সেখানে থাকবে ছোলা, মুড়ি, খেজুর ও রান্না করা খাবার। রাজধানীর যেসব এলাকায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের বসবাস বেশি সেসব এলাকায়ই বিদ্যানন্দের ইফতার গাড়ি যাবে।

ডিএমপি-বিদ্যানন্দ ইফতার গাড়ি

প্রতি বছর রোজার মাস ব্যাপী বিদ্যানন্দের একটি ইফতার গাড়ি বিশেষ করে রাজধানীর বস্তি এলাকাতে গিয়ে ইফতার বিতরণ করে। তবে এবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিদ্যানন্দ আরও একটি ভ্রাম্যমাণ ইফতার গাড়ি নিয়ে আসছে। এই গাড়িটির নাম ডিএমপি-বিদ্যানন্দ ইফতার গাড়ি। আগামীকাল অর্থাৎ প্রথম রোজার দিন ডিএমপির তেজগাঁও থানায় এই গাড়ি উদ্বোধন করা হবে।

এ বিষয়ে বিদ্যানন্দের হেড অফ কমিউনিকেশনস সালমান খান ইয়াসিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিএমপির সঙ্গে যৌথভাবে আমরা এবার নতুন আরও একটি ইফতার গাড়ি নিয়ে আসছি। আগামীকাল গাড়িটি তেজগাঁও থানায় উদ্বোধন করবে। প্রথম রোজা থেকে ২৫ রোজা পর্যন্ত এই গাড়টি ডিএমপির ২৫টি থানায় এলাকায় ইফতার বিতরণ করবে। প্রতিদিন একটি থানায় এলাকায় গাড়িটি যাবে। এই গাড়ি বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে শুধু মাত্র ইফতার বিতরণ করা হবে না, সঙ্গে ইফতার সংগ্রহও করা হবে। কেউ যদি অসহায় মানুষদের জন্য ইফতার দিতে চান তাহলে এই গাড়িতে দিতে পারবেন। পরে পুলিশ ও বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক দল দান করা ইফতার মানুষের মাঝে গিয়ে বিতরণ করবেন। এই গাড়ি পরিচালনায় ডিএমপির থানা পুলিশের সদস্যরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। যে থানা এলাকায় গাড়িটি যেদিন যাবে, সেই দিন সেই এলাকার থানা পুলিশ সহযোগিতা করবেন।

এক পরিবারের ২ জনকে দেওয়া হবে রান্না করা ইফতার

প্রতিবারের মতো এবারও বিদ্যানন্দ সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে রান্না করা ইফতার বিতরণ করবে। এই রান্না করা ইফতারে থাকবে তেহারি। এছাড়া এর সঙ্গে থাকবে ছোলা, মুড়ি ও খেজুর।

বিদ্যানন্দ জানায়, রান্না করা এই ইফতার শুধু মাত্র রাজধানীতে বিতরণ করা হবে। রাজধানী সুবিধা বঞ্চিত পরিবারগুলোর মধ্যে এই ইফতার যাবে। প্রতিটি পরিবারের দুই জন সদস্য এই ইফতার পাবেন। বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক দল এই ইফতার সরাসরি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রোজার ৩০ দিন গিয়ে গিয়ে বিতরণ করে আসবেন। এছাড়া প্রতিদিন রাতে ৫০০ জন সুবিধা বঞ্চিত মানুষকেও এই স্বেচ্ছাসেবক দল সাহরি বিতরণ করবেন।

রোজার মাস উপলক্ষ্যে কার্যক্রম নিয়ে বিদ্যানন্দের হেড অফ কমিউনিকেশনস সালমান খান ইয়াসিন বলেন, আমরা এই রোজার মাসের শুরুর দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত ইফতার ও সাহরি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াব। সারাদিন রোজা রাখার পর যেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষ একটু ভালো ইফতার করতে পারেন সেই চেষ্টা করব। এবার আমরা ৩ লাখ মানুষের কাছে ইফতার বিনামূল্যে পৌঁছে দিতে পারব বলে আশা করি। এছাড়া রাজধানীতে প্রতিদিন ৫০০ জনকে সাহরি দেওয়া হবে। উপকূলের দেড় হাজার সুবিধাবঞ্চিত পরিবারকে ইফতার সামগ্রী বিতরণের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছি।

এমএসি/কেএ