বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর কথা অনুযায়ী ১৯৭১ সালে আমাদের যুদ্ধটা ছিল মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতা যুদ্ধ বলতেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করে সব কিছু শেষ করতে চাইতেন। কিন্তু আমরা তো মুক্তির যুদ্ধ করেছি, আমরা তো এখনো মুক্তির সংগ্রাম করছি। আসলে স্বাধীনতা যুদ্ধ বললে মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করে দেখা হয়।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে রোববার (২৬ মার্চ) আগারগাঁওয়ের বন ভবনের হৈমন্তী মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভার মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ প্রমুখ।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণা করে অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, সাংবাদিক এন্থনি মাসকারেনহাস প্রশ্ন করেছিলেন, ১৯৭০ এর নির্বাচনে ১৬৯টি আসনের মধ্যে আপনার দল কয়টি আসন পাবে? উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিল, ’নির্ধারিত আসনের মধ্যে দুটি বাদে ১৬৭টি আমরা পাবো’। ফলাফলে তাই হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এও বলে দিয়েছিলেন, বাকি দুটি আসন কার কাছে যাবে। নুরুল আমিন ও রাজা ত্রিদিব রায়। অথচ সেসময় সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা ডিজিএফআই রিপোর্ট দিয়েছিল আওয়ামী লীগ পাবে ৮০ আর ভুট্টোর পিপলস পার্টি পাবে ২৫টি আসন। যা ছিল সম্পূর্ণ ভুল। প্রশ্ন উঠতে পারে বঙ্গবন্ধু কি তবে জৌতিষী ছিলেন। আসলে তার মধ্যে এক্সট্রা সেন্সরি পারসেপশন ছিল।

অথচ ওই নির্বাচনে জয় লাভের পরও আওয়ামী লীগ ক্ষমতা পেল না। দেশ উত্তাল হয়ে উঠল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু বলে দিলেন, 'এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম'। আমি উপস্থিত থেকে শুনেছি। ১৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ও ১৩০৮ শব্দের ভাষণ।

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, নুরুল ইসলাম ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠ। তিনি তার আত্মজীবনীমূলক বইয়ে মুজিবনগর সরকারকে বলেছেন প্রবাসী সরকার। যা দেখে আমি খুবই আশ্চর্য হয়েছি। আবার আরেক জায়গায় তিনি বলছেন, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্ম। তাহলে ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর বঙ্গবন্ধু যে ঘোষণা দিয়েছেন, ’সম্ভবত এটাই আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন’। সেই থেকে ২৬ মার্চ আমরা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছি। আসলে তিনি (নুরুল ইসলাম) হয়তো স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস দুটিকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন। এটা উচিত নয়। ইতিহাস নগ্ন সত্যই বলে। ইতিহাস কাউকে তোয়াক্কা করে না। আমাদের উচিত মুক্তিযুদ্ধকে যথার্থভাবে মূল্যায়ন করা। বঙ্গবন্ধু মুক্তির কথা তিনবার বলেছেন। স্বাধীনতার কথা বলেছেন মাত্র একবার।

আজকে ৫৩ বছরে পা দিলো বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ-সেই মানুষ আর স্বাধীনতার প্রতি আমরা কতটুকু দায়িত্ব পালন করেছি; সেই প্রশ্ন তুলে এ অধ্যাপক বলেন, বঙ্গবন্ধু সংবিধানে একটি ধারা সংযোজন করেছিলেন। ৭.১ ধারা। প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণের ওপরই এদেশের এগিয়ে বা পিছিয়ে যাওয়া।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে পাকিস্তান কারাগার থেকে বেরিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। তখন এক ইংরেজ সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি গিয়ে কী করবেন? দেশটা তো ধ্বংস হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু উত্তরে বলেছিলেন, আমার মাটি ও মানুষ যদি থাকে তাহলে আমরা আবারো ঘুরে দাঁড়াবো। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। জিডিপির হার ছিল ৯ ভাগ। এ তথ্য চেপে যাই আমরা। আমি হাতে কলমে এই তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেই বাংলাদেশে আসলে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু উন্নয়ন এখনো হয়নি। আমার মতে, সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধিই হচ্ছে উন্নয়ন। আমরা এগুচ্ছি, দীপ্ত পায়ে এগুচ্ছি। কিন্তু আমাদের বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে জানতে হবে, বুঝতে হবে। পথ একজনই তৈরি করেন। যে পথে হাঁটার মানুষের অভাব হয় না। আমরা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে হাঁটছি কি না, কতটুকু হাঁটছি সেটাই এখন দেখার বিষয়।

জেইউ/এসএম