ইফতার বিকিকিনির জন্য পুরান ঢাকার চকবাজারের পর যে নামটি সবার আগে আসে সেটি হলো বেইলি রোড। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সুপরিচিত এ এলাকায় রমজান মাসজুড়ে রেস্টুরেন্টগুলো বাহারি ইফতারের পসরা নিয়ে বসে। এখানকার বাহারি ইফতারে বুদ হওয়াদের অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে আসেন পছন্দের আইটেম কিনতে। তবে এই ইফতারের বাজারে সাজানো আইটেমের যে দাম রাখা হচ্ছে, তা নিয়ে অনেক ক্রেতাই অভিযোগ করেছেন। 

সোমবার (২৭ মার্চ) বিকেলে বেইলি রোডের ইফতারের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এসব দোকানে জিলাপি ও হালিমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। মাংসের পদ দিয়ে বানানো ইফতারের চাহিদাও কোনো অংশে কম নয়। এছাড়া গরমের কারণে লাচ্ছি ও ফালুদা বিক্রি হচ্ছে বেশ।

বেইলি রোডে ইফতারের জন্য বিখ্যাত 'ক্যাপিটাল'। এ রেস্টুরেন্টে ইফতারির ১০০ আইটেম পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে সুতি কাবাব কেজি ১ হাজার ৫০০ টাকা, মাটন চাপ কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা, বিফ চাপ কেজি ১ হাজার ৪০০ টাকা, বিফ কালাভুনা কেজি ১ হাজার ৪০০ টাকা, বিফ কিমা কেজি ১ হাজার ৫০০ টাকা, বিফ কলিজা কেজি ১ হাজার ৫০০ টাকা, ব্রেইন মসল্লা কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা, কাবলি চানা ১ কেজি ৫০০ টাকা, চিকেন ঝালফ্রাই কেজি ১ হাজার টাকা, চিকেন দোপেঁয়াজা কেজি ১ হাজার টাকা, জাফরানি জিলাপি কেজি ৪০০ টাকা, গ্রিল চিকেন ফুল ৪৮০ টাকা, মাটন লেগ প্রতি পিস ৬৫০ টাকা, মালাই কাবাব ২২০ টাকা, খাসির হালিম  ৪০০, ৬০০ ও ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্যাপিটালে কথা হয় মগবাজারের বাসিন্দা ইয়াকুব খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখান থেকে মাংসের কিছু আইটেম কিনলাম। ওদের কিছু আইটেম বাসায় খুব পছন্দ করে। প্রতি বছরই দেখছি দাম বাড়ছে। দাম বাড়ার কথা বললেই ওদের উত্তর রেডি থাকে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।

বিক্রয়কর্মী আরিফ মাহমুদ জানান, এ রেস্টুরেন্টের মাংসের আইটেমের একটা খ্যাতি রয়েছে। সব ধরনের মাংসের দাম অনেক বাড়তি। যে কারণে গত বছর যে দামে বিক্রি করা হয়েছে, সেই দামে এবার বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

সরেজমিন দেখা গেছে, বেইলি রোডের দোকানগুলোতে ৫০০, ৮০০, ১২০০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন আকারের হাঁড়িতে হালিম কিনছেন ক্রেতারা। সঙ্গে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, আলুরচপ, পেঁয়াজু, জিলাপি ছাড়াও অনেকে পিৎজা, চিকেন ফ্রাই, চিকেন রোল, পেস্ট্রিসহ বিভিন্ন  আইটেমের খাবার কিনে বাসায় ফিরছেন অনেকে।

মোহাম্মদ শিপন নামের এক ক্রেতা ইফতারের দাম নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কোনো আইটেমে হাত দেওয়া যায় না। মাংস জাতীয় খাবার বাদই দিলাম, ৫০ টাকার নিচে কেউ ছোলা বিক্রি করতে রাজি না। বেগুনি, আলুরচপ বা পেঁয়াজু কিনবেন, নরমাল একটা দোকানেও প্রতি পিছ ১০ টাকার নিচে নাই। অনেক দোকানে তো প্রতি পিছ বিক্রি করছে ২০ টাকা করে। যে যেভাবে পারছে টাকা নিচ্ছে।

নবাবীভোজের মূল্য তালিকায় দেখা যায়, শাহী ছোলা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩০০ টাকায়, পেঁয়াজু, বেগুনি, সবজি পাকোড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিচ ১৫ টাকায়। সুইট লাচ্ছি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়, পেস্তা বাদামের শরবত বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।

এ দোকানের স্পেশাল রেশমি জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে। আর পাঁচ ধরনের বাটিতে বিক্রি হচ্ছে গরু, খাসি ও মুরগির হালিম। দাম ৫০০ থেকে শুরু করে এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত।

বেইলি রোডের বাসিন্দা শামসুর নাহার বলেন, ইফতারির অনেক আইটেম বাসায় করা হয়। কিন্তু এখানকার হালিমটা ভালো, তাই নেওয়া। কিন্তু দাম আরও কিছুটা কম হলে ভালো হতো।

নবাবী ভোজের সহকারী ম্যানেজার সারোয়ার হো‌সেন মাহতাব ব‌লেন, দাম নি‌য়ে অ‌ভি‌যোগ থাক‌তেই পা‌রে ক্রেতা‌দের। কিন্তু আমার ম‌নে হয়, খুব বে‌শি দাম রাখা হ‌চ্ছে। বর্তমান দ্রব্যমূ‌ল্যের স‌ঙ্গে সমন্বয় ক‌রে দাম ঠিক করা হয়। 

এনআই/জেডএস