দুদিন আগেও যেখানে রঙিন কাপড়গুলো মোড়ানো ছিল স্বচ্ছ পলিব্যাগে, আজ সেগুলো পুড়ে ছাই হয়ে পড়ে আছে। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে যে মার্কেট ছিল জমজমাট, আজ সেখানে ধ্বংসস্তূপ আর হাহাকার। নতুন কাপড়ের গন্ধের বদলে সেখানে শুধুই পোড়া গন্ধ। এসবে মধ্যেই একটু-আকটু ভালো কাপড় খুঁজতে ভিড় জমিয়েছেন অনেকেই।

বুধবার (৫ এপ্রিল) বঙ্গবাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানে পুড়ে যাওয়া কাপড় চোপড়সহ মালামাল পুড়ে ছাই, সেগুলো আবার পড়ে আছে এখানে সেখানে। সেই কাপড়ের মধ্যে থেকে ভালো কিছু কাপড় বের করতে বা খুঁজতে এসেছেন আশপাশের এলাকার অনেকেই। সেই সঙ্গে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষেরাও বেশ ভিড় জমিয়েছেন পুরো বঙ্গবাজার এলাকায়।

তাদের মধ্যে অনেকে দুই একটা শাড়ি, প্যান্ট ও শার্ট জাতীয় পোশাক পেয়েছেন। যার মধ্যে কিছু পোড়া, আবার কোনো কোনটা অল্প কিছু ভালো আছে। এমন লাখ লাখ পোড়া কাপড় মিলে পুরো বঙ্গবাজার পরিণত হয়েছে যেন স্তূপে। এমন সব স্তূপ আর পড়ে থাকা পোড়া কাপড় সংগ্রহে এখানে ভিড় জমিয়েছেন মানুষ।

বঙ্গবাজার সংলগ্ন আনান্দবাজার বস্তি থেকে এসেছেন শামছুন্নাহার নামের এক গৃহিনী। তিনি বলেন, অনেকে খবর দিলো এখানে পোড়া জিনিসের মধ্যে দুই একটা ভালো কাপড় পাওয়া যাচ্ছে, তাই এসেছি। দুই একটা পাইছি কিন্তু অর্ধেক অংশে পোড়া দাগ আছে। এমন সব কাপড় সংগ্রহ করতে আমার মতো অনেকে এসেছে। 

পাশের এলাকা থেকে আসা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, মার্কেটের পুড়ে যাওয়া মাল পাওয়া যাচ্ছে এই খবর পুরো এলাকায় ছড়িয়ে গেছে। তাই তো দল বেঁধে সবাই এসে ফেলে দেওয়া কাপড়গুলো থেকে বেছে বেছে দেখছি ভালো কিছু পাওয়া যায় কি না। তবে আমাদের কেউ বাধা দেয়নি। আমরা গরিব মানুষ তাই কেউ কিছু বলছে না।

এ বিষয়ে বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন বলেন, এগুলো মূলত বঙ্গ মার্কেটের পোড়া মালামাল। এখানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সবকিছু পুড়ে গেছে। আশপাশের দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষরা এসে এসবের মধ্যে বেছে দেখছে ব্যবহার করার মত ভালো কিছু পাওয়া যায় কি না। আমারা এসব পোড়া মালামাল সরিয়ে এক জায়গায় করে রাখছি, সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি এসে এগুলো নিয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তারা। পরে প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এ আগুনে বঙ্গবাজারসহ আশপাশের ৬টি মার্কেটের ৫ হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। প্রাথমিকভাবে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

এএসএস/কেএ