১১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ খালেকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

সিআইডি বলছে, টাকার অঙ্কে গরমিল এবং ভুয়া জমা বা ফেক ডিপোজিটের মাধ্যমে এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। অপরাধের পুরো প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখেন এম এ খালেকের স্ত্রী সাবিহা খালেক, ছেলে শাহরিয়ার খালেদ রুশো, মেয়ে শারওয়াত খালেদ ও তার স্বামী তানভিরুল হক। অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি স্বজন ও সহযোগীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ৫৮৫ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ান এম এ খালেক।

আদালতের নির্দেশে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে এসব অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের তথ্য উঠে এসেছে।

সিআইডি’র একটি দল অনুসন্ধান শেষে এসব তথ্য পাওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ডিএমপি ঢাকার মতিঝিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) আইনে মামলা দায়ের করে। মামলা নং- ৩।

মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক চেয়ারম্যান এম এ খালেক, সাবেক সিইও তরফদার জাহাঙ্গীর আলম (৫০), সাবেক সিইও মো. জাহিদুল হক (৪৪), সাবেক সিএফও এম এ খালেকের স্ত্রী সাবিহা খালেক (৬২), এম এ খালেকের ছেলে শাহরিয়ার খালেদ রুশো (৩৯), এম এ খালেকের মেয়ে শারওয়াত খালেদ (৩৬), এম এ খালেকের মেয়ের জামাতা তানভিরুল হক, এম এ খালেকের মেয়ের শ্বশুর ফজলুল হক (৬৬), আবুল কাশেম মোল্লা (৭৫), রাশেদ মোহাম্মদ মাজহারুল (৩৭), খশরুবা সুলতানা শিল্পী (৪৫), শেখ ইউসুফ আলী (৬১), মাহবুবা সুলতানা (৪৯), দিলরুবা সুলতানা, নজরুল ইসলাম (৫৭), মিজানুর রহমান মোস্তফা ও কাজী শাহরিয়ার।

অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্টরা জানান, এম এ খালেক ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের টাকা অপরাপর আসামিদের সহায়তায় লেয়ারিং করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। এম এ খালেক তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর ৮৯ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৭ টাকার চেক বা নগদ টাকা জমা করেন।

বুধবার (৫ এপ্রিল) সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, কোনো রকম অর্থ পরিশোধ না করেই খালেকের পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের বিও অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা দেখানো হতো। খালেকের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এভাবে কোটি কোটি টাকা জমা করতেন। এরপর সেই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিতেন। আত্মসাতের অর্থে খালেকের পরিবার কানাডায় সেকেন্ড হোম গড়েছেন। তার স্ত্রী-সন্তানরাও কানাডায় পালিয়েছেন।

সিআইডি জানায়, স্বজন ছাড়াও খালেক তার সহযোগীদের বিও অ্যাকাউন্টে ফেক ডিপোজিট দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। এ আত্মসাতের টাকার একটি অংশ সহযোগীদের তিনি ভাগ করে দিতেন। খালেকসহ এ অপকর্মে জড়িত ১৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করেছে সিআইডি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি তরফদার জাহাঙ্গীর আলম ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটি লি. কোম্পানিতে হেড অব অপারেশন ও জাকির হোসেন ভূইয়া একই কোম্পানিতে হেড অব মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের কার্যক্রম শুরুতেই তরফদার জাহাঙ্গীর আলমকে প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং জাকির হোসেনকে এভিপি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের শুরুতেই ২০১০ ও ২০১১ সালে তরফদার জাহাঙ্গীর আলম জাকির হোসেনসহ অন্য আসামিরা ১১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকার চেক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নিয়ে কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া জমার বিপরীতে মার্জিন রুল ব্যত্যয়পূর্বক লোন প্রদান করে আর্থিকভাবে লাভবান হন।

সিআইডি জানায়, লুটপাটের টাকায় ঢাকার গুলশানের বারিধারায় গড়ে তোলা খালেকের ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের চারতলা আলিশান বাড়ি সম্প্রতি ক্রোক করা হয়েছে। বাড়িটি গুলশানের বারিধারা আবাসিক এলাকার কে-ব্লকের ৬ নম্বর রোডের ২ নম্বরে। গুলশান সাবরেজিস্ট্রি অফিসের বাড়িটির দলিল নম্বর ৬২১। ৮ শতাংশ ৮ ছটাকের ওপর চারতলা আলিশান বাড়িটি ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি কেনেন এম এ খালেক। বাড়িটির দলিল মূল্য ছিল ৬৫ কোটি টাকা। তবে পুলিশ বলছে, বর্তমান বাড়িটির মূল্য অন্তত ১৫০ কোটি টাকা।

জেইউ/