রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আবার কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে অর্থ দিয়ে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

রোববার (৯ এপ্রিল) সকাল থেকে সরেজমিনে দেখা যায়, নানা সংগঠন ও পেশার মানুষ বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ দান করে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছেন।

সকাল পৌনে ১১টার দিকে আলেয়া নামে এক হিজড়া তার হজ্জের টাকা থেকে ২ লাখ টাকা দেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের। এরপর সোয়া ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন কুমিল্লা- ৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তার নেতৃত্বে ২৬ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয় ব্যবসায়ীদের তহবিলে।

এ সময় আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম ১০ লাখ টাকা দেব। কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করেছিলাম তোমরাও ১০ লাখ টাকা দাও। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বললাম তুমিও ৫ লাখ টাকা দাও। আমরা ২৫ লাখ টাকা তাৎক্ষণিক ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের প্যানেল মেয়রও ১ লাখ টাকা দিয়েছেন। আমরা ২৫ লাখ টাকার কথা বললেও ২৬ লাখ টাকা হস্তান্তর করেছি আজ।

আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার যাওয়ার পর পরই বঙ্গবাজার উপস্থিত হন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরে নিজেদের একদিনের বেতন ও ইফতারের খরচ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেয় অধিদপ্তরটি।

এদিন দুপুর ১২টার দিকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, আমাদের অফিসার্স ও কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার জন্য একদিনের বেতন ও ইফতারের খরচের ২ লাখ টাকা তুলে দিয়েছি। এর একটাই কারণ আমরা যে কাজগুলো করেছি, এতে অনেক ব্যবসায়ী মনে করেন তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমরা যে তাদের পাশে আছি এ জন্য এটি একটি প্রতীকী অংশগ্রহণ। এখানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যেন ভালোভাবে ঈদের আনন্দ করতে পারে।

সব শেষে রাজধানীর বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ লাখ টাকা সহায়তা করেছে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠী (হিজড়া)।

বাংলাদেশ হিজড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মির দিপালী হিজড়া সাংবাদিকদের বলেন, গত ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে আমরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলেছি। আজকে তাদের এই বিপদের সময় আমরা আমাদের এবারের ঈদের যেসব কেনাকাটা রয়েছে সেই কেনাকাটা না করে ব্যবসায়ী ভাইদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। সারাদেশ থেকে ২০ লাখ টাকা আমরা তুলেছি। সেই টাকা আজ তাদের কাছে দিতে এসেছি। তারা বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকবো।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, তালিকা করার বিষয়ে আমরা বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতিকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা দেখভাল করছেন। তবে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। এখানে যারা সদস্য তারাই সিদ্ধান্ত নিবেন কে থাকবে, কে থাকবে না। এখন পর্যন্ত ২৯০০ ব্যবসায়ীর তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় ব্যবসায়ীদের রাখা দরকার।  কারণ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসায়ীরা। তাই শতভাগ ব্যবসায়ীদের তালিকা হওয়া প্রয়োজন। তারপর এখানে যদি কখনো ভবন হয়, তখন মালিক যারা আছেন তারা কে কি বরাদ্দ পাবেন সেটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র দেখবে। কারণ এই মার্কেটের মালিক সিটি করপোরেশন।

অগ্নিকাণ্ডের স্থানে ব্যবসায়ীরা বসতে চাচ্ছেন, কিন্তু এখনো ধ্বংসস্তূপ সরানো যায় নি। এটা সরাতে কতদিন লাগবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম দু'একদিনেই পরিষ্কার করা যাবে। কিন্তু যেখানে হাত দিচ্ছে সেখানেই আগুন। ফলে নতুন করে আবার পানি দিয়ে নেভাতে হচ্ছে। এই কারণে সরাতে সমস্যা হচ্ছে। কারণ আগুনসহ ট্রাকে তোলা যাবে না। এটা ঝুঁকিপূর্ণ। ঈদের আগে ব্যবসায়ীরা বসতে পারবে কী না এটা এখন বলতে পারছি না।

এমএসি/এমজে