রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে বঙ্গবাজার মার্কেট, এনেক্সকো টাওয়ার, মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট পুড়ে গেছে। আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বঙ্গবাজার মার্কেট।

আগুন লাগার তিন দিন পর শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টায় আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। তবে এখনো আগুন জ্বলছে বঙ্গবাজার মার্কেটে। আগুনের পাশাপাশি বঙ্গবাজার মার্কেটে প্রচণ্ড ধোঁয়াও দেখা গেছে। ওই ধোঁয়া ও আগুনের কারণে কাজ করতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে কাজ করা কর্মীদের।

রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা যায়।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপ সরাতে কাজ করছেন ১০-১৫ জন শ্রমিক। তারা ধ্বংসস্তূপ থেকে লোহা ও টিন কেটে কেটে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। ভেতর থেকে লোহা ও টিন কেটে উপরে তোলার পর নিচে থেকে আগুন জ্বলে উঠছে। এই আগুন জ্বলছে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে থাকা বিভিন্ন কাপড়ের টুকরায়। এছাড়া সাত-আট জাগায় প্রচণ্ড ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। আগুন ও ধোঁয়ার কারণে শ্রমিকদের বারবার পিছিয়ে আসতে হয়। আগুন নেভানোর পর ধোঁয়া কমে গেলে তারা আবার কাজ শুরু করছেন।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, বঙ্গবাজারের তিনটি জায়গায় ছোট ছোট আগুন ঘণ্টাখানেক ধরে জ্বলছিল। এছাড়া কয়েক জায়গা থেকে ধোঁয়াও বের হচ্ছিল। তবে এই আগুন ও ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে শ্রমিক ছাড়া কাউকে কাজ করতে দেখা যায়নি। পরে এসব ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে ট্রাকে করে অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অনুমতিক্রমে ৪০ লাখ টাকায় মেসার্স বুশরা টেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ধ্বংসস্তূপ বিক্রি করে।

রোববার ওই প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা কর্মী রবিউল বলেন, বারবার গলা শুকিয়ে আসছে ময়লা পরিষ্কার করতে করতে। ভেতরে প্রচুর তাপ, যা বলার বাইরে। ওপর থেকে আমরা যত বার লোহা কেটে বের করছি, ততবারই ভেতরের ধ্বংসস্তূপ থেকে আগুন জ্বলে উঠছে। আগুনের তাপে ঠিক মতো কাজ করা যাচ্ছে না। এছাড়া ৭-৮ জায়গায় ধোঁয়া উড়ছে, এর কারণে আমাদের কাজ করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে।

মো. সিয়াম নামে আরেক কর্মী বলেন, দিনের বেলাই তো কিছু দেখা যায় না। রাতে দেখা যায় এখানে কত আগুন ও ধোঁয়া আছে। হাতেপায়ে মোজা পরেও তাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। হাত-পা ঝলসে যাওয়ার উপক্রম।

বঙ্গবাজারের এখনো জ্বলতে থাকা আগুন নিয়ে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেল কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বঙ্গবাজার মার্কেট এলাকায় এখন ধ্বংসস্তূপের ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। ফলে ভেতর থেকে মাঝে মধ্যে ছোট আগুন ও ধোঁয়া বের হয়ে আসছে। তবে এটা কোনো সমস্যা না। আর শ্রমিকরা যদি সমস্যা মনে করে তাদের আমরা জানাতে বলেছি। তারা জানালে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে এসব বিষয় সমাধান করব।

মার্কেটের আগুনের খবর জানি না, তবে দিলের আগুন নিভে নাই

বঙ্গবাজার মার্কেটের ধ্বংসস্তূপে নিজেদের দোকান দেখতে রোববার দুপুরে আসেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। ধ্বংসস্তূপ দেখে অনেকে ব্যবসায়ী হা-হুতাশ করছিলেন। মার্কেটে আগুন জ্বলার বিষয়ে জানতে কথা বলতে গেলে তাদের একজন ব্যবসায়ী মো. হিরা বলেন, মার্কেটের আগুনের নিভছে কি না জানি না, তবে দিলের আগুন নিভে নাই। মার্কেটে আমার তিনটি দোকান ছিল এসআর টেডার্স নামে। আমাদের দোকানে শুধু ভারতীয় শাড়ি ছিল। ঈদের আগে অনেক শাড়ি উঠিয়েছিলাম। আগুনে পুড়ে কোটি টাকার মালামাল শেষ হয়ে গেছে। তাই মার্কেটের দুয়েক জায়গায় ছোট আগুন দেখলেও এখন আর গায়ে লাগে না। মার্কেটের আগুন দিয়ে কি করব, দিলের আগুন তো নিভছে না।

ধ্বংসস্তূপের মাঝে জেগে ওঠার চেষ্টা

একদিকে বঙ্গবাজারজুড়ে স্বপ্ন পোড়া ধ্বংসস্তূপ, আরেকদিকে আবার নতুন করে উঁকি দিচ্ছে আশার আলো। আবারও ভালো দিনের স্বপ্ন দেখছেন কেউ কেউ। বঙ্গবাজার মার্কেটের দক্ষিণ পাশে অস্থায়ীভাবে দোকান বসিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। দোকান নিয়ে বসলেও বেচা-কেনা হচ্ছে নামমাত্র। তারপরও শূন্যের মাঝে ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

বঙ্গবাজার মার্কেটের দক্ষিণ পাশের রাস্তায় অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসা মো. নাহিদ বলেন, বঙ্গবাজার মার্কেটে আমার ব্যাগ বাজার নামে একটি দোকান ছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে। এখন তো আর কিছু করার নেই, তাই রাস্তায় দোকান নিয়ে বসেছি জীবনের তাগিদে। দোকানে প্রতি দিন ১৫-২০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। গত দুই দিন ধরে রাস্তায় বসেছি, বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা। এই টাকা তো আমার কর্মচারীদের খরচও না।

রাস্তায় অস্থায়ী কাপড়ের দোকান নিয়ে বসেছেন বঙ্গ বাজারের ব্যবসায়ী মো. নরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি আজ থেকে রাস্তায় বসছি। সারা দিনে এখন পর্যন্ত বিক্রি ৫০০ টাকা। ভেতরে যখন দোকান ছিল তখন দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হয়ে যেত ১০ হাজার টাকার কাছাকাছি। কি আর করার, তারপরও তো ঘুরে দাঁড়াতে হবে। নাহলে পরিবার নিয়ে চলব কীভাবে।

এমএসি/এসএসএইচ/