স্ত্রীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় নূর নবীকে খুন করেন কবির
স্ত্রীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় পরিকল্পিতভাবে গলা কেটে খুন করা হয় নবী হোসেন ওরফে নূর নবীকে। এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড কবির (২৫) ও জড়িত আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মহিদুল ইসলাম মাহি (২৮), কবির (২৫), ইমরান আহম্মেদ (২০) ও ফয়সাল আহমেদ দিপু (৩২)।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১০ এপ্রিল )দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক।
তিনি বলেন, গত ৫ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ সংবাদ পায় বসিলা গার্ডেন সিটি অংশে বুড়িগঙ্গা নদীতে গলাকাটা একটি মৃতদেহ ভাসছে। সংবাদ পেয়ে থানার একটি টিম দ্রুত সেখানে উপস্থিত হয়। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে মৃতদেহের পরিচয় শনাক্তের কাজ শুরু করে। ঘটনার দিন বিকেল ৫টার দিকে মো. আলী হোসেন লাশটি তার ভাই নূরনবীর বলে শনাক্ত করেন।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ পেয়ে বসিলা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা উপস্থিত হন। বসিলা নৌ-পুলিশ মৃতদেহটির সুরতহাল তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজসে তার ভাইকে জোরপূর্বক অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুম করা সংক্রান্তে একটি মামলা করেন।
এ ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর হওয়ায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। তদন্তকালে জানা যায়, নিহত নূরনবী সাভারে পরিবারসহ বসবাস করতেন। তিনি মোহাম্মদপুরে লেগুনা চালাতেন। মাঝে মধ্যে লেগুনার লাইনম্যানের কাজও করতেন।
গত ৪ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১০টার দিকে তার ভাই আলী হোসেন তাকে ফোনে না পেয়ে খোঁজ-খবর নিতে থাকেন। পরে জানতে পারেন কয়েকজন ব্যক্তি তার ভাইকে জোরপূর্বক বসিলার দিকে নিয়ে গেছেন। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ আসামিদের ধরতে বসিলা এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। বসিলা এলাকায় বিভিন্ন হাউজিংয়ের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, প্রযুক্তি বিশ্লেষণ ও সোর্সের সহায়তায় অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়। পরে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস) তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযান চালিয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে মহিদুল ইসলাম মাহি, বসিলা থেকে ফয়সাল আহমেদ দীপু, পল্লবী থেকে কবির ও সিলেটের ওসমানীনগর থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করে।
আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নূরনবী ও গ্রেপ্তার আসামিরা একে অপরের পূর্ব পরিচিত। আসামি কবিরের সঙ্গে নিহত নূরনবীর আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। কিছুদিন আগে নূরনবী আসামি কবিরের স্ত্রীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয় ও বিরোধ আরও বাড়ে।
এতে করে কবির নূরনবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার বিষয়টি অন্য তিনজনের সঙ্গে শেয়ার করলে তারা নূরনবীকে হত্যার পর লাশ গুম করার পরামর্শ দেন। পরে নূরনবীকে মদ খাওয়ানোর লোভ দেখানো হয়। এরপর মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে কবির কৌশলে নূরনবীকে বসিলা গার্ডেন সিটি সাবেদ আলী মসজিদের সামনে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে অন্য আসামিরা কবিরের সঙ্গে মিলিত হয়ে নূরনবীকে নিয়ে নদীর পাড়ে যান। কবির আগে থেকেই ১০টি ঘুমের ওষুধ বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে সংগ্রহ করে তা মদের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে আসেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নদীর পাড়ে ওয়াকওয়েতে বসে নূরনবীকে ঘুমের ওষুধ মেশানো মদপান করতে দেওয়া হয়। মদপান করার কিছুক্ষণ পর নূরনবী অচেতন হয়ে পড়লে আসামিরা তাকে ওয়াকওয়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে আসামি কবির নূরনবীর মাথায় ইট দিয়ে কয়েকটি আঘাত করেন। একপর্যায়ে ইমরান সঙ্গে আনা ধারালো ছুরি দিয়ে নূরনবীর গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে কবির মৃতদেহটি টেনে নিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেন। এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্য কেউ জড়িয়ে থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এসএএ/কেএ