মামলার বিচার শেষে সাজাপ্রাপ্তকে কারাগারে পাঠানো হলে ওই আসামিকে সাদার মধ্যে কালো ডোরাকাটা জামা ও পায়জামা পরতে হয়। প্রমাণিত অপরাধী বলে তাদের আলাদা করে চিহ্নিত করে রাখার এই কৌশল চলছে ব্রিটিশ আমল থেকেই। তবে সম্প্রতি কারাগারে কয়েদির পোশাক পরা নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। কারাবিধি লঙ্ঘন করে কারাগারগুলোতে নিজের ইচ্ছেমতো পোশাক পরছেন কয়েদিরা।

সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্টে কয়েদির পোশাক নিয়ে বড় মাশুল দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। আগস্টে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে পালিয়ে যান যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি আবু বক্কর ছিদ্দিক। তিনি কারাগারের মূল ফটক দিয়ে হাতে একটি মই নিয়ে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে বের হয়ে পালিয়ে যান। কয়েদি হলেও তার পরনে কয়েদির পোশাক ছিল না।

পোশাক নিয়ে কারাগারের ভেতরের সাম্প্রতিক বিশৃঙ্খলায় নড়েচড়ে বসেছে কারা অধিদফতর। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা মাথায় রেখে দেশের ৬৮টি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার, জেলারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সতর্ক করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। 

কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুনের পক্ষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেনের দেওয়া চিঠিতে লেখা হয়েছে, ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশের কারাগারগুলোতে আটক কয়েদিরা নির্ধারিত কয়েদি পোশাক না পরে সাধারণ পোশাক পরে কারা অভ্যন্তরে চলাফেরা করেন। এতে কারাগারের শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। এমনকি বন্দি পলায়নের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। সুষ্ঠু কারা প্রশাসনের সুবিধার্থে প্রত্যেক কয়েদিকে কারা বিধি অনুযায়ী বাধ্যতামূলক নির্ধারিত পোশাক পরাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কারাগারে নিয়ম অনুযায়ী কয়েদিদের একটি নির্দিষ্ট পোশাক পরার কথা। অনেক সময় দেখি এই জায়গাটায় ব্যত্যয় ঘটে। তাই বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকে কয়েদিদের নির্দিষ্ট পোশাক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েদিদের নির্দিষ্ট পোশাক আছে, হাজতিদের নেই। তাদের পৃথক করার জন্যই এই পোশাক দেওয়া হয়। এছাড়া নির্দিষ্ট পোশাকের বাধ্যবাধকতা কারাবিধিতেও রয়েছে। এটি মেনে সবাইকে শৃঙ্খলভাবে চলতে হবে।’

চলতি মাসেই চট্টগ্রাম কারাগারের ভেতরের একটি ভবনের চার তলা থেকে লাফিয়ে পালান ওই আদালতে বন্দি থাকা হত্যা মামলার আসামি ফরহাদ হোসেন রুবেল। ওই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে কারা অধিদফতর। চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার ও ডেপুটি জেলারকে বদলি, দুই কারারক্ষীকে বরখাস্ত ও সহকারী প্রধান কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়। এই ঘটনায়ও কারাগারগুলোকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল।

জঙ্গি-সন্ত্রাসী কারাবন্দিদের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি
এদিকে করোনাকালে কারাবন্দি জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীসহ চিহ্নিত আসামিরা কারাগারের বাইরে তথ্য পাচার করছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এজন্য তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও অনেকটা পরিবর্তন এনেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

কারা সূত্র জানায়, আগে শীর্ষ সন্ত্রাসী, যুদ্ধাপরাধীসহ চিহ্নিত বন্দিরা পরিবারের সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ পেতেন। তবে করোনাকালে সাক্ষাৎ বন্ধ হওয়ার পর তারা শুধুমাত্র ফোনেই কথা বলতে পারতেন। মার্চের ১ তারিখ থেকে পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ চালু হওয়ার পর বন্দিদের ফোনে কথা বলা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তারা মাসে একবার শুধুমাত্র বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ভাই-বোনের মতো একান্ত আপন আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এআর/এমএসি/এনএফ/এমএমজে