দেশের শপিং মল ও মার্কেটগুলোতে সারারাত নিজস্ব লোক মোতায়েন করতে বলেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।

রোববার (১৬ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট ও শপিং মলের অগ্নিঝুঁকি নিরসন এবং অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন ফায়ারের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইন্টেইনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক বলেন, মার্কেটের ব্যবসায়ী ও মালিক সমিতিকে আমরা বলতে চাই, আপনারা মার্কেটের বিভিন্ন পয়েন্টে সারারাত নিজস্ব লোক নিয়োগ দিন। এতে করে যে শুধু নাশকতা রোধ করা যাবে তা না, বর্তমানে দেশের তাপমাত্রা বেশি, যদি অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মার্কেটের কোনও দাহ্য পদার্থে আগুন লাগে তারা প্রাথমিকভাবে আগুন নেভাতে কাজ করবে।

এছাড়াও তিনি দেশের মার্কেটগুলোতে রাতে থেকে ধূমপান না করা, রান্না না করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

পরিচালক বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ডিজিএফআই-এনএসআই সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আমরা প্রতিটি মার্কেট পরিদর্শন করেছি। তবে অতি বেদনার সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, পরিদর্শনে আমরা যা দেখেছি তা সন্তোষজনক নয়। পরিদর্শনের পর আমরা অনেক মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছি ও তাদের পরামর্শ দিয়েছি। 

তিনি বলেন, এসব মার্কেটে অনেক ক্ষেত্রেই অগ্নিনিরাপত্তা আইন মানার ক্ষেত্রে চরম অবহেলা দেখা গেছে। এছাড়াও অধিকাংশ মার্কেটের লোকজনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর ধারণা নাই, সেখানে অগ্নিনিরাপত্তা মহড়াও হয় না। এসব অবহেলার কারণে আগুন লাগছে এবং সম্পত্তি ও জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মার্কেটে আগুন লাগার আরও বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মার্কেটের নন ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন নির্মাণ, নকশাবহির্ভূত এক্সটেনশন, মার্কেটের দোকানে গাদাগাদি করে কার্টুনে মালামাল রাখা, নিয়ম না মেনে মার্কেটের দোকানের ভেতর রাত্রিযাপন, ধূমপান করা, গ্যাস ব্যবহার করে খাবার রান্না করা ইত্যাদি। 

তিনি বলেন, আমরা আজকে সকাল থেকে চারটি মার্কেটের মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের এ বিষয়ে ধারণা দিয়েছে। 

‘সম্প্রতি লাগা মার্কেটের আগুনগুলোতে উৎসুক জনতার ভিড়ের কারনে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়’ -উল্লেখ করেন পরিচালক।

এর আগে শনিবার (১৫ এপ্রিল) নিউ মার্কেট এলাকার ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। এ বিপণিবিতানের তৃতীয় তলায় শনিবার ভোরে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ভয়াবহ আগুনে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় কমপক্ষে ২৫০টি দোকান পুড়ে গেছে। বেশির ভাগই কাপড়ের দোকান। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকার মতো হবে বলে প্রাথমিকভাবে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। অগ্নিকাণ্ডে কেউ মারা না গেলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২৪ কর্মীসহ ৩২ জন আহত হয়েছেন।

এই ঘটনার ঠিক ১১ দিন আগেই ৪ এপ্রিল আগুন লাগে বঙ্গবাজারের কয়েককটি মার্কেটে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজারের ২ হাজার ৯৬১টি দোকান পুড়ে গেছে। এ ছাড়া মহানগর মার্কেটের ৭৯১টি, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের ৫৯টি এবং বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সের ৩৪টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৩০৩ কোটি টাকা।

এআর/এসএম