প্রণোদনার চেয়ে দ্রুত মার্কেটের ব্যবসায়িক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তাদের বলছেন, সরকার আমাদের কত টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে সে বিষয়ে আমাদের ধারণা আছে। এ দিয়ে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা দোকানের সংস্কার  কাজও করতে পারব না। তাই ব্যবসায়ীদের বাচাঁতে দ্রুত সময়ের মধ্যে মার্কেটে ব্যবসায়িক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া হোক। তাহলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। তা না হলে সব সম্পত্তি বিক্রি করেও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারব না।

রোববার (১৬ এপ্রিল) সকালে নিউ সুপার মার্কেট ব্যবসায়ীদের হাতে চাবি বুঝিয়ে দেন ফায়ার সার্ভিস। এরপর ভেতরে ঢুকে শুধু ছাই আর ছাই দেখতে পান ব্যবসায়ীরা। অনেকের দোকানের ক্যাশ টাকাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ দৃশ্য দেখার পর অনেক ব্যবসায়ী মূর্ছা যান। অজ্ঞান হয়ে পড়েন কেউ  কেউ। তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সরজমিনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিউ সুপার মার্কেটে তৃতীয় তলায় ৩৫০টি বেশি দোকান ছিল। দ্বিতীয় তলায় ছিল ৩০০টির মতো দোকান। অগ্নিকাণ্ডে তৃতীয় তলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ তলার সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

নিউ সুপার মার্কেটে ২৫০ নম্বর দোকান নাটাই ফ্যাশন হাউজের মালিক তৌহিদুর রহমান। দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের শার্ট ও প্যান্ট বিক্রি করতেন তিনি। ঈদের আগের দোকানে ৫০ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলেন। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিক্রির ৫ লাখ টাকা ছিল দোকানে। 

রোববার সকালে ব্যবসায়ীদের দোকানে ঢোকার অনুমিত দেয় ফায়ার সার্ভিস। তিনি প্রথমে দোকান ঢুকেই ক্যাশ বাক্সের কাছে যান। ক্যাশে হাত দিয়ে পুড়ে যাওয়া টাকার ছাই বের করতে থাকেন আর কান্না করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সেখানে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পাশের দোকানিরা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে এনে মাথায় পানি দেওয়ার কয়েক মিনিট পর জ্ঞান ফেরেন। তখনো তার চোখে কান্না লেগেই ছিল।

তিনি বলেন, সারাজীবনের কষ্টের ফসল এই দোকান। দোকানটিতে প্রচুর বেচা-কেনা হতো। আমরা দুই ভাই মিলে দোকানটা নিজেদের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছিলাম। ঈদের আগে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল উঠিয়েছি। আজ সকালে এসে দেখি শুধু ছাই আর ছাই। আগুনের খবর পাওয়ার পর আমার মা গতকাল থেকে কিছু খায়নি। সারাক্ষণ শুধু কান্না করছে।   

ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, অগ্নিকাণ্ডে মালিকরা একেবারে নিঃস্ব। গতকাল সকাল ৬টায় আগুনের খবর পেয়ে আমরা এসে দেখি পুরো দোকানে আগুন। একটা মালও বের করতে পারিনি। দোকানে ৫ লাখ টাকা ক্যাশ ছিল। পুরো টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দ্রুত সময়ে মার্কেট সংস্কার করে ব্যবসায়িক পরিবেশ ফিরিয়ে দিলে সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।

তিনি বলেন, ১০ লাখ টাকার মালামাল ছিল, এর মধ্যে ৬ লাখ টাকা ঋণ। আমি আগে একটা দোকানে চাকরি করতাম। ঋণ করে এখন একটি দোকানের একপাশ কিনেছি। এই ক্ষতি কীভাবে পোষাব এটা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। কেউ যদি সাহায্য করতে চায় তাহলে ভালো...তার আগে ব্যবসায়িক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমার একটা শাড়ির দোকান ছিল। আগুন লাগার পর ঢুকতে পারিনি। আজকে দোকনে গিয়ে দেখি অর্ধেক কাপড় পুড়ে গেছে। কিছু চুরি হয়ে গেছে। বাকিগুলো বিক্রির অনুপযোগী। এই অবস্থায় আমি কী করবো জানি না। আমার বাচ্চা অসুস্থ। প্রতিমাসে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আমি চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি। কয়েকদিন আগে হিসাব করছি, ১৯ লাখ টাকার মালামাল ছিল। আরও কিছু টাকা ধার করে ঈদের জন্য মালামাল সংগ্রহ করেছি। বেচাকেনার দেড় লাখ টাকাও দোকানে ছিল, সেই টাকাও পুড়ে ছাই।

তিনি আরও বলেন, যত দ্রুত সম্ভব মার্কেট সংস্কার করে ব্যবসায়িক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া হোক। তা না হলে ঋণের বোঝায় আমরা শেষ হয়ে যাব।

এসময় ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী, সিটি কর্পোরেশন ও দোকান মালিক সমিতির নেতাদের কাছে দ্রুত মার্কেটের ব্যবসায়িক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। 

এনএম/কেএ