আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের কর্মচারী পরান সরকার/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

ঈদের বেচাকেনা যখন পুরোদমে জমে উঠেছে ঠিক তখনই আগুনে ছাই হয়ে গেছে রাজধানী নিউ সুপার মার্কেটের ৫ শতাধিক দোকান। এসব দোকানে কাজ করা কয়েক হাজার কর্মচারী এখন কর্মহীন। অনেকেই রোববার মালিকের সঙ্গে এসেছেন দোকান দেখতে। পোড়ার দৃশ্য দেখে তারাও মালিকের সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

দোকান কর্মচারীরা বলছেন, এক সপ্তাহে পর ঈদ। করোনার পর এই ঈদে ব্যবসা ভালো হবে এমনটাই আশা ছিল ব্যবসায়ীদের। এক আগুনে এখন নিঃস্ব মালিক। কোন মুখে তাদের কাছে বেতন-বোনাস চাইব?

রোববার সকালে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সুপার মার্কেট ভবনটি ব্যবসায়ীদের কাছে বুঝিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস। এরপর দোকানের মালিক ছাড়াও কর্মচারীরা আসেন পুড়ে যাওয়া দোকান দেখতে।

ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, কর্মচারীরা দোকানের লক্ষ্ণী। তারা দোকানের বেচাবিক্রি করেন। আমরা অনেকটাই তাদের উপর নির্ভরশীল। সামনে ঈদ। তাদের বেতন বোনাস না দিলে পরবর্তীতে আর পাব না। আগুনে মালিকারাও নিঃস্ব, কর্মচারীরা নিঃস্ব। গতকাল পৌনে ৬টায় আগুনের খবর পেয়ে এসে দেখি আমার পুরো দোকানে আগুন ছড়িয়ে গেছে। একটা মালও বের করতে পারিনি। এখন কর্মচারীদের বেতন বোনাস কীভাবে দেব?

এ দোকানে কাজ করতেন রোবায়েত। তিনি বলেন, মালিকের কান্না দেখে আমি বোবা হয়ে গেছি। খুবই ভালো মনের মানুষ তিনি। সামনে ঈদ। আমারও পরিবার আছে। বেতন বোনাস না পেলে পরিবারের ঈদ কীভাবে হবে। এক আগুনে মালিক নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এখন কোন মুখে তার কাছে বেতন বোনাস চাই?

হাতে রাখা পোড়া টাকা দেখিয়ে কর্মচারী বেলাল বলেন, মালিক শুক্রবার আমার বেতন দিয়েছিলেন। সেই টাকা আমি নিইনি। মালিককে বলেছিলাম, বোনাসসহ একসঙ্গে দিয়েন। আজ ক্যাশে গিয়ে দেখি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের বেচাবিক্রির ৫ লাখ টাকার সঙ্গে আমার টাকাও পুড়ে চাই হয়ে গেছে।

দোকান কর্মচারীরা জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে নতুন পোশাক তোলেন ব্যবসায়ীরা। শুধু ঈদের ব্যস্ততা সামাল দিতে অতিরিক্ত কর্মচারী-বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দেন। চাঁদরাত পর্যন্ত চলে ব্যস্ততা। ভালো ব্যবসা হলে মালিকদের পক্ষ থেকে কর্মচারীদের বেতনের পাশাপাশি বাড়তি বোনাসও দেওয়া হয়। নিউ সুপার মার্কেটে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে ৫ শতাধিক দোকান। নিঃস্ব কয়েকশ ব্যবসায়ী। এবার ঈদের আনন্দ এক সপ্তাহ আগেই ফিকে হয়ে গেছে নিউ সুপার মার্কেট ঘিরে যাদের রুটি-রুজি, সেসব দোকান কর্মচারীর পরিবারেরও। অধিকাংশ কর্মচারীকে এবার ঈদে গ্রামের বাড়ি ফিরতে হবে শূন্য হাতে। এমন পরিস্থিতিতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার দোকান কর্মচারীর।

পরান সরকার নামে এক বিক্রয়কর্মী বলেন, আমি ২৫০ নম্বর নাটাই ফ্যাশন হাউজে কাজ করতাম। শনিবারের আগুনে আমার মালিক নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আজ দোকানে গিয়ে ছাই ছাড়া আরও কিছু মেলেনি।

তিনি বলেন, মালিক কয়েকবার অজ্ঞান হয়েছেন। তার ক্যাশে ৫ লাখ টাকা ছিল। একটা টাকাও আর ব্যবহারযোগ্য নেই। সব পুড়ে গেছে। দোকানে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সব শেষ। এখন আমি তার কাছে কীভাবে বেতন বোনাস চাই?

তিনি বলেন, শুধু আমি না, এ মার্কেটে কয়েক হাজার দোকান কর্মচারীদের এবার ঈদের কোনো আনন্দ থাকবে না। সবাইকে শূন্য হাতে পরিবারের কাছে যেতে হবে।  

এনএম/এসকেডি