মার্কেট ঝুঁকিমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে ‘বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ঘোষিত ২ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 

শেখ তাপস বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রমে যেতে হবে। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা নয়, ঝুঁকিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তা যেন আর ব্যবহৃত না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। এই পূর্ণ কার্যক্রম এর আগে নেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন ডিএসসিসি এই কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আমরা স্থায়ী কমিটি গঠন করেছি। তারা এই বিষয়গুলো পরিপূর্ণভাবে খতিয়ে দেখবে। নির্মাণ কাঠামোগতভাবে ঝুঁকি ও অগ্নিনির্বাপণ সংক্রান্ত ঝুঁকি এসব বিষয় তারা খতিয়ে দেখবে।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি মার্কেটকে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে আমরা পর্যায়ক্রমে তা করব। যদি মার্কেট ভেঙে ফেলতে হয় তবে সেটা ভেঙে ফেলা হবে ও নতুন করে নির্মাণ করা হবে। যদি সেটা সংস্কারযোগ্য হয় তাহলে পর্যাপ্ত সংস্কার করতে বাধ্য করা হবে। সে মালিক হোক, মার্কেট ব্যবসায়ী হোক অথবা সিটি করপোরেশন হোক, কর্তৃপক্ষ যেই হোক না কেন, এই ব্যবস্থা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদেরকেই সম্পন্ন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরমধ্যে বিডাকে নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে করে তারাও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়। সুতরাং আমরা সম্মিলিতভাবে এখন থেকে কার্যক্রমগুলো হাতে নেব। এখন আমরা আগামীতে ১০ বছর বা দীর্ঘমেয়াদী একটি সময় নির্ধারণ করব। পর্যায়ক্রমে দীর্ঘমেয়াদে ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করতে, মার্কেটগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে আমরা প্রয়োজনীয় ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করব। 

মেয়র তাপস বলেন, বঙ্গবাজারে পাশাপাশি নতুন করে যে অগ্নিকাণ্ডগুলো যোগ হচ্ছে তাতে আমরা অত্যন্ত শঙ্কিত ও মর্মাহত। প্রায় প্রতিদিনই আগুন লেগে চলেছে। বঙ্গবাজার ডিএসসিসির একটি বৃহৎ পাইকারি মার্কেট। গত শনিবার আমরা দেখলাম, নিউ সুপার মার্কেটেও আগুন লেগেছে। সেটিও ডিএসসিসির আরেকটি বড় মার্কেট। এ দুটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড হওয়াতে আমরা অত্যন্ত শঙ্কিত। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন এবং তিনি এরই মাঝে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এর কোনো যোগসূত্র রয়েছে কিনা, এটি কোনো নাশকতা কি না, তা খতিয়ে দেখতে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন তৎপর। তারা এসব দুর্ঘটনার পেছনের কারণগুলো ও রহস্য উদঘাটনে কার্যক্রম গ্রহণ করছে। আমরা মনে করি, অবশ্যই এই রহস্য উদঘাটন হবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, এই দেশে মানুষ কাজ করতে চাইলে কাজ করতে পারে। ৪ তারিখে আগুন লাগার পরে ৬ তারিখ পর্যন্ত আগুন জ্বলল। ৭ তারিখে মেয়রসহ আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, কীভাবে ব্যবসায়ীদের বসিয়ে দেওয়া যায়। মেয়র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই জায়গাটাকে পরিষ্কার করতে বললেন। প্রায় আড়াই হাজার টন বর্জ্য এখান থেকে সরিয়ে ঠিক বুধবার ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আমরা সেই জায়গাটা প্রস্তুত করতে পেরেছিলাম। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, আমরাই পেরেছি। এটা আর কেউ পারবে বলে মনে আমার মনে হয় না। মেয়র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছেন, বিগত দিনে অন্য কেউ আর দাঁড়ায়নি। সেজন্য মেয়রকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

পরে ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল হতে ২ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। 

অনুষ্ঠানে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, পরিবহন মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দর আলী, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, বঙ্গবাজার মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, কাউন্সিলরদের মধ্যে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শহিদ উল্লাহ মিনু, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল বাশার ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সিরাজুল ইসলাম ভাট্টি উপস্থিত ছিলেন।

এএসএস/কেএ