চারিদিকে হেলপারদের হাঁকডাক। ‘সিট ফাঁকা, ভালো সিট, একরেট, ডাইরেক্ট, একবারে গেটলক’- এমন হাঁকডাকে ঈদের আমেজে মেতেছে পুরো মহাখালী বাসস্ট্যান্ড। তবে অন্যান্যবারের মতো রাজধানীর ব্যস্ততম এই বাস টার্মিনালে আজ (বুধবার) সেই হিসেবে খুব বেশি যাত্রীর চাপ নেই।

এরপরও মহাখালী বাস টার্মিনালে ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের কাছে থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন কিছু কিছু বাসচালক ও হেলপার। যদিও বাসচালক ও হেলপারদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ বেশ আগে থেকেই ছিল। সে কারণে বিষয়টি নিয়ে বেশ বিরক্ত ছিলেন যাত্রীরা। 

আরও পড়ুন>>ঢাকা ছেড়েছেন ১২ লাখ মানুষ

বুধবার (১৯ এপ্রিল) মহাখালী বাস টার্মিনালে টাঙ্গাইলগামী বিনিময় বাস ও ময়মনসিংহগামী সৌখিন বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন অনেকে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়মনসিংহগামী সৌখিন বাস অন্যসময় ১৫০/২০০ টাকা ভাড়া নেয়। তবে আজ তারা যাত্রীদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা আদায় করছে। অন্যদিকে অন্যসময় টাঙ্গাইলগামী বিনিময় বাস ৩০০ টাকা ভাড়া নিলেও আজ নিচ্ছে ৫০০ টাকা।

যাত্রীদের এমন অভিযোগ জানতে মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। আজ (বুধবার) তিনি আগে মহাখালী বাস টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে দেখেন। এরপর তিনি চলে যান টার্মিনালের দক্ষিণ অংশের দিকে, অর্থাৎ যে অংশ দিয়ে টার্মিনাল থেকে বাসগুলো বের হচ্ছে।

সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান কাউন্টার ছাড়া ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছে টাঙ্গাইলগামী বিনিময় বাস। এসময় বিনিময় বাসের হেলপার যাত্রীদের হাতে লেখা টিকিট দিচ্ছেন। বাসটির টিকিট হাতে বাসের গেটের সামনে অপেক্ষা করছিলেন এক নারী। বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে দেখে তিনি অভিযোগ করে বলেন- ‘ভাড়া বেশি নিয়েছে’। 

আরও পড়ুন>>মহাখালী-গাবতলী ফাঁকা থাকলেও সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ীতে যানজট

এসময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার যাত্রীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেন, ‘কোথায় যাবেন?’ জবাবে সেই নারী জানান, তিনি যাবেন টাঙ্গাইলে। তিনি অভিযোগ করেন, সব যাত্রীদের কাছ থেকে এই বাস অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। 

ওই নারী যাত্রী বলেন, ‘আমার কাছ থেকেও ২০০ টাকা ভাড়া বেশি নিয়েছে। তারা বলছে, যেখানেই যাবেন ভাড়া ৫০০ টাকাই দিতে হবে।’

যাত্রীর এমন অভিযোগে এই বাস মালিককে শাস্তি দিতে ম্যাজিস্ট্রেটকে আসার নির্দেশনা দিলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান। বের করা হলো দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়ার তালিকা। কাগজে-কলমে মিলিয়ে দেখা হলো দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া ৩৯৭ টাকা। অথচ বাসটি ওই নারী যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া আদায় করেছে ৫০০ টাকা। মুহূর্তেই সেই বাসের যাত্রা বন্ধ করে প্রয়োজনীয় শাস্তি প্রদানের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনা দেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান। এ অবস্থায় বাস রেখে পালিয়ে যান বাসচালক ও হেলপার। অভিযুক্ত বাসচালক ও হেলপারদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাদের খুঁজে পাননি বিআরটিএ চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন>>চাপ নেই যাত্রীর, তবুও ২০০ টাকার ভাড়া ৪০০

বিনিময় পরিবহন ঢাকা মেট্রো-ব ১১৬৫৭২ নম্বরের বাসটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভুক্তভোগী যাত্রী ডা. প্রিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি টাঙ্গাইল যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনালে এসেছি। অন্যসময় ভাড়া ৩০০ টাকা করে নেওয়া হলেও আজ সবার কাছ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া নিয়েছে। আমি মূল বাসস্ট্যান্ড থেকে আরও আগে নেমে যেতে চাইলেও ওরা আমাকে বলেছে ঈদের সময় যেখানেই নামুন ভাড়া ৫০০ টাকা। এমন অবস্থায় বিআরটিএ চেয়ারম্যান আমার কাছে জানতে চেয়েছেন অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে কি না। উত্তরে আমি জানিয়েছি আমার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। 

সার্বিক বিষয় নিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, প্রতি বছর ঈদের সময় আমাদের কাছে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আসে। এমন অবস্থায় আমরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছি। এখানে আমরা দূরপাল্লার বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে খোঁজ নিয়েছি সবাই সঠিক ভাড়াই নিচ্ছিল। দুই এক জায়গায় যারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।

আরও পড়ুন>>স্ট্যান্ডিং ও কমিউটার ট্রেনের টিকিট পেতে দীর্ঘলাইন

তিনি বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো বাস কর্তৃপক্ষ যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে সে লক্ষ্যে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। ভাড়ার তালিকার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেলেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এএসএস/কেএ