ঈদের বাকি নেই বেশি। শহর থেকে গ্রাম সবখানেই চলছে ঈদের কেনাকাটার তোড়জোড়। বড় বড় শপিং মল তো আছেই, রাজধানীর ফুটপাতগুলোতেও চলছে দেদার কেনাবেচা। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই দোকানিদের। তবে পণ্যের দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে।

সাধারণত ফুটপাতের নিম্ন আয়ের লোকজন কেনাকাটা করতে যায়। কিন্তু এবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে সেখানেও। তাই প্রতিটি পণ্যের দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। বাড়তি দামের কারণে বিপাকে পড়েছেন ফুটপাতে কেনাকাটা করতে আসা লোকজন।

মতিঝিলের ফুটপাতে পাঞ্জাবি কিনতে আসা আব্দুল মালেক নামে এক ক্রেতা বলেন, সব জিনিসের দাম বেশি। পরিবারের সকলের জন্য শপিং মল থেকে জামা-কাপড় কিনেছি। আমার নিজের জন্য এখান থেকে একটা পাঞ্জাবি ও পায়জামা কিনতে এসেছি। কয়েকটি দোকান দেখলাম কিন্তু ফুটপাতেও দাম অনেক। শেষ সময়ে এসে দাম আরও বেড়েছে মনে হচ্ছে। কিছুই করার নেই; কিনতে তো হবেই।

এদিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশের ফুটপাতে কথা হয় ফরিদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‌‘আমাগো কি আর ঈদ আছেরে বাবা! যা কিছুতে হাত দেই আগুন জ্বলা দাম। রিকশা চালাইয়া যা ইনকাম করি তা দিয়ে সংসার চালাইতেই হিমশিম খাই। এখন আবার বেটা-মাইয়া-গো লাইগা এসব কিনতে গেলে আরও সমস্যা হচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পাশের ফুটপাত ছাড়াও মতিঝিল, গুলিস্তানসহ আশেপাশের এলাকাগুলোয় চলছে জমজমাট কেনাবেচা। এসব দোকানে পাঞ্জাবি, পাজামা, টুপি, আতর, তসবিহ, জায়নামাজ, হিজাব, বিভিন্ন ধরনের জিন্স এবং শার্টসহ অসখ্য প্রসাধনী সামগ্রীর পসরা বসিয়েছেন দোকানিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিজাইন ও মান ভেদে প্রতিটি পাঞ্জাবি ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় মাঝারি মানের সিঙ্গেল পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া কাপড়ের মান ভেদে ২০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পায়জামা। ঈদ সামনে রেখে ক্রেতারা সাদা পাঞ্জাবি এবং পায়জামার দিকেই বেশি আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

এদিকে ৪০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে হরেক রকম টুপি। ৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ৩ মিলি ও ৬ মিলি আতর। আতরের দোকানগুলোতে জোপি, ওয়ান ম্যান শো, হোয়াইট উড, আমির আর উদ, মেশক আম্বর, দালাল এবং মিক্সড আতরগুলো ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।

এদিকে ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের জিন্স প্যান্ট, ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় মেয়েদের হিজাব, ২০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের ফ্রক এবং মানভেদে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিভিন্ন ধরনের জায়নামাজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

টুপি-আতর কিনতে আসা রাব্বি হোসেন বলেন, ঈদে আতর না হলে চলেই না৷ আর নতুন টুপি ছাড়া তো ঈদের নামাজ পড়া যায় না। আমি প্রতি বছর আতর আর টুপি কিনি। এ বছর সবকিছুর দাম একটু বেশি। তবে বায়তুল মোকাররমের সামনের আতরগুলো ভালো।

শার্ট বিক্রেতা মামুন জানান, এ বছর বেচা-বিক্রি অনেক খারাপ। অন্যবারের তুলনায় এ বছর তেমন কিছুই বিক্রি করতে পারিনি। আপাতত কিছু কাস্টমার থাকলেও অনেকেই পণ্য দেখে চলে যান।

পাঞ্জাবি বিক্রেতা আকবর আলী বলেন, লোকজন আসছে কিন্তু কিনছে খুব কম। চাহিদা থাকলেও অনেকেই কিনছেন না। তাছাড়া ২০ রমজান অবধি ভালো বিক্রি হলেও এখন তেমন একটা বিক্রি হচ্ছে না। 

এমএম/এসকেডি