নিরাপত্তা নিশ্চিতেই আনন্দ পান তারা
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা শেষে আজ (শনিবার) পালিত হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি অনেক আনন্দের দিন। এদিন সবাই পরিবার-প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটাতে চান। যার ফলে গত কয়েকদিনে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেছেন কর্মব্যস্ত মানুষজন। কিন্তু এর বাইরেও একদল মানুষ আছেন, যারা প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে কর্মস্থল ছেড়ে যেতে পারেনি। পরিবার থেকে দূরে থেকে গেছেন শুধুমাত্র ভবনের নিরাপত্তার জন্য। বলছি কেয়ারটেকার-দারোয়ানের কথা।
রাজধানী ঢাকায় প্রায় কয়েক কোটি মানুষের বাস। বেশিরভাগই থাকেন বড় অট্টালিকায়। এসব অট্টালিকার পাহারায় যারা থাকেন তারা সচরাচর পরিবার-প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে নিজ নীড়ে ফিরে যেতে পারেন না। এই শহরে এমন অনেক অট্টালিকার কেয়ারটেকার আছেন, যারা টানা এক দশক ধরে ঈদে নিজ পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারেননি। পেশাদারিত্ব আর আরেকজনের নিরাপত্তার স্বার্থে বাধ্য হয়ে বিষয়টা মেনেও নিয়েছেন তারা। এখন হাসিমুখেই তারা বলেন, মানুষের নিরাপত্তা দেওয়াটাই বড় আনন্দের বিষয়।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২২ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাসার কেয়ারটেকার ও দারোয়ানের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, অনেকেই ১০-১২ বছর যাবৎ ঈদের সময় ঢাকায় থাকেন। পরিবারের কাছে যান ঈদের পরে।
রাজধানীর মগবাজার এলাকায় একটি বাসায় কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করেন খবির হোসেন। তিনি বলেন, আমি প্রায় ৭ বছর যাবৎ পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারি না। প্রথম বছর খুব খারাপ লাগলেও এখন আর খারাপ লাগে না। কারণ, এ ভবনে যতগুলো মানুষ থাকেন তাদের নিরাপত্তা দেওয়াটা এখন আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। তাই এই নিরাপত্তা দেওয়াটাই আমার কাছে আনন্দের।
বিজ্ঞাপন
এক যুগ কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করা ওবায়দুল হোসেন বলেন, ঈদ আমরা পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারি না ঠিকই। কিন্তু ঢাকা শহরেও আমাদের পরিবার আছে। আমরা যারা পাশাপাশি বাসায় কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করি, তারাও পরিবারের মতো থাকি। একজনের দুঃখ-কষ্টে অন্যজন পাশে দাঁড়াই। একসঙ্গে গল্প করি। বন্ধুর মতো সময় পার হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, কাজ তো করি পরিবারের জন্যই। ঈদে সবার কাজ বন্ধ থাকলেও তো আমাদের কাজ বন্ধ থাকে না। সবাই যখন ফিরে, তখন আমরা বাড়ি যাই।
অন্য একটি বাসার কেয়ারটেকার আবুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাজের তাগিদে ১০ বছর আগে ঢাকায় এসে কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন শুরু করি। প্রথম বছর মালিক আমাকে ঈদে বাড়িতে যেতে দেয়নি। তখন একটা চাপা কষ্ট অনুভব হয়েছে নিজের মধ্যে। ধীরে ধীরে সেটি কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এখন একটু খারাপ লাগলেও তেমন অসুবিধা হয় না।
তিনি আরও বলেন, ‘বাড়িতে আমার ছেলে-মেয়ে, ছেলের বউসহ আপনার চাচি থাকে। ওদের সাথে একটু আগে কথা বললাম মোবাইলে। আমি তো ছুটিতে যাবোই। বাসার লোকজন ঢাকায় ফিরলেই আগামী মাসে ছুটিতে যাবো। তখন আমার পরিবর্তে খণ্ডকালীন একজন দায়িত্ব পালন করবেন। আমার ঈদ হয়ত তখন শুরু হবে। সেই ভেবে এখন আর দায়িত্ব পালন করতে কষ্ট হয় না। সবাই যদি একসঙ্গে আনন্দ করতে যায়, তাহলে বাসার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে কে?’
প্রতিটি উৎসবে সারাদেশে মানুষের জায়গা স্থানান্তর হয়। সবাই কর্মস্থল থেকে ফিরে পরিবারের কাছে। এসময়টাতে নিজের ঈদ আনন্দ বিসর্জন দিয়ে অতন্ত্র প্রহরীর মতো নিরাপত্তার কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে করে থাকেন বাসার কেয়ারটেকাররা।
এমএইচএন/এমজে