চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার ১১৪তম আসর উপলক্ষ্যে বসেছে বৈশাখী মেলা। মেলায় নগরের কোতোয়ালি মোড় থেকে আন্দরকিল্লা মোড়, কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের অংশ, লালদিঘীর চারপাশ, জেলা পরিষদের আঙিনা এবং সিনেমা প্যালেসসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বসেছে দুই থেকে আড়াই হাজার ভ্রাম্যমাণ দোকান।

প্রায় দেড় বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসা দোকানগুলোতে কী নেই? মাটির তৈরি তৈজসপত্র ও খেলনা থেকে শুরু করে ফুলদানি ও পুতুল, বেত-কাঠ ও বাঁশের তৈরি নানা আসবাবপত্র, হাতপাখা, মাছ ধরার পলো, ডালা, কুলো, গাছের চারা, মুড়ি মুড়কি, শীতল পাটি, দা-বটি, ছুরিসহ গৃহস্থালির সব ধরনের সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে এসব দোকানে।

জানা গেছে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে বক্সিরহাট এলাকার স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর নগরীর লালদিঘী মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। যা সময়ের পরিক্রমায় জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। বৈশাখের ১২ তারিখে লালদিঘীর ময়দানে বলী খেলা হয়। এ উপলক্ষ্যে তিনদিন ধরে চলে মেলা। এবারের আসর উপলক্ষ্যে মেলা শুরু হয় সোমবার থেকে। শেষ হবে বুধবার।

চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান এই মেলা থেকে পণ্য কিনতে লোকজন এক বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকেন। কারণ এখানে একসঙ্গে যত ঐতিহ্যবাহী পণ্য পাওয়া যায়, স্বাভাবিক সময়ে এসব পাওয়া যায় না। 

মেলায় এসেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ঝুলন ধর। তিনি বলেন, প্রতিবছর এই মেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকি। এবারও এসেছি। এবার ঈদের মধ্যে মেলা। বলতে গেলে ডাবল আনন্দ। এটা আনাদের প্রাণের মেলা। এই মেলায় ঐতিহ্যবাহী সব পণ্য পাওয়া যায়। আমি গৃহস্থালির জন্য অনেক কিছু নিয়েছি।

নগরের কদমতলী নাজিরপুল থেকে আসা দোকানি মোহাম্মদ জুয়েল বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে বেশিরভাগ লোক বাড়িতে। এজন্য হয়তো কম বিক্রি হচ্ছে। আমি ফুলের ঝাড়ু এবং শলার ঝাড়ু বিক্রি করছি। পাহাড়ি এলাকা থেকে ঝাড়ুর জন্য ফুল সংগ্রহ করা হয় এবং খুলনা ও যশোর থেকে শলা সংগ্রহ করা হয়েছে।

মাটির তৈরি তৈজসপত্রের দোকানি আমীর আলী বলেন, এখনো বিক্রি পুরোদমে শুরু হয়নি। লোকজন কম এসেছেন। আগামীকাল বুধবার অর্থাৎ মেলার শেষের দিন বিক্রি কেমন হয় জানি না। শেষ দিকে বিক্রি না হলে ক্ষতি হয়ে যাবে।

সড়কে দায়িত্বরত সার্জেন্ট সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সড়কের একপাশে দোকান। তারপরও যানচলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে যানবাহনের চাপ কম। এজন্য এখনো যানজট হয়নি। আমাদের চেষ্টাও সর্বোচ্চ আছে।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১১৪তম আসরের বলী খেলার প্রতিযোগিতা। এবারের আসরে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে ৬০ জন বলী। মোট ৩০ রাউন্ড খেলা হবে। প্রথম পুরস্কার দেওয়া হবে ২৫ হাজার টাকা। দ্বিতীয় পুরস্কার ২০ হাজার, তৃতীয় ৮ হাজার এবং চতুর্থ স্থান অধিকারীকে ৬ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়া অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে দেড় হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

মেলার সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি বাবু জহর লাল হাজারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাঁশের ওপর উঁচু করে বালি দিয়ে মঞ্চ বানানো হয়েছে। যাতে সবাই দেখতে পারে। মেলায় অংশগ্রহণের জন্য ১০০ বলী আবেদন করেন। যাচাই-বাছাই শেষে ৬০ জনকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

এমআর/এমএ