রাজধানীতে রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ করেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে এমএ (মাস্টার্স) পাস করা মো. রফিকুল ইসলাম। কাজ পেলে দিনে তার আয় হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। আর কাজ না থাকলে খালি হাতেই ফিরতে হয় বাসায়। পড়াশোনা করেও চাকরি না পেয়ে সংগ্রামমুখর জীবন পার করছেন রফিকুল ইসলাম।

সোমবার (১ মে) আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের দিন সকালে নতুন বাজার এলাকায় ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় রফিকুল ইসলামের।

শ্রমিক দিবস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বছর ঘুরে শ্রমিক দিবস এলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের চাকা কখনো ঘুরে না। দিবস ছাড়া কেউ কোনোদিন খোঁজও নেয় না। কাজ করলে খাবার জোটে আর না করতে পারলে উপোস থাকতে হয়।’

‘পড়াশোনা করেও আজকে শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে। চাকরির জন্য গেলে ঘুষ চায়। কিন্তু আমরা তো জন্মগতভাবে গরিব... তাই চাইলেই ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে পারি না। ২০২২ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে এমএ পাস করে আজকে শ্রমিকের কাজ করছি।’

‘পরিবার আছে, তাদের নিয়ে কী করব? কীভাবে চলব? না পারি কিছু করতে, না পারি মানুষের কাছে হাত পাততে। শ্রমিকের কাজ না করে কী করব? চাকরি তো পাই না, তবে জীবন তো চালাতে হবে।’

জোগালি হিসেবে কাজ করে কত টাকা আয় হয়, জানতে চাইলে রফিকুল বলেন, ‘কোনোদিন কাজ পাই, আবার কোনোদিন পাই না। তাছাড়া প্রতিদিন মজুরিও সমান আসে না। কোনোদিন ৫০০ টাকা আবার কোনোদিন ৬০০ টাকা আয় হয়। কিন্তু যাতায়াত খরচ ও খাওয়া-দাওয়া শেষে আর কিছুই থাকে না। চাল, ডাল ও তরিতরকারি সবকিছুই তো কিনতে হয়। আর সবকিছুরই দাম এখন বাড়তি।’

‘গরিবরা কী খেয়ে বাঁচবে আর কী করে চলবে, এ বিষয়ে সরকারের কোনো ভাবনা নেই। সমাজের বিশিষ্টজনেরাও এ বিষয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা করে না।’

শ্রমিক দিবসে প্রত্যাশার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক চাকরিজীবীর নির্দিষ্ট বেতন নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু আমার মতো শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কোনো বেতন নেই। কাজের জন্য পথে বসে থাকি, যদি কাজ পাই তাহলে করি, আর নয়তো বাসায় ফিরে যাই। এভাবে আমাদের চলাটা খুবই কঠিন হয়ে যায়। সরকারের কাছে আবেদন, আমাদের মতো খেটে খাওয়া শ্রমিকদের একটু দেখাশোনা করবেন, খোঁজ-খবর নেবেন। পাশাপাশি শ্রমিকদের একটা মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ করে দেবেন।’

প্রসঙ্গত, বিশ্ব শ্রমিক দিবস আজ, যা ‘মে দিবস’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পয়লা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরও অনেক দেশে দিন বেসরকারিভাবে পালিত হয়। বাংলাদেশে দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। মে দিবসে সরকারি ছুটি থাকে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়ে থাকেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন দিনটি পালন করতে শোভাযাত্রা, শ্রমিক সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানান কর্মসূচি হাতে নিয়ে থাকে।

টিআই/কেএ