শুরুটা হয়েছিল ভ্যান গাড়িতে চায়ের পসরা সাজিয়ে। মূলত বিদেশ ফেরত একজন মানুষ যিনি চেয়েছিলেন কিছু একটা করতে। কিন্তু তেমন পুঁজি ছিল না। তাই গাড়ি সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তবে থেমে থাকেননি। দুবাইয়ের রাজকীয় চায়ের ফর্মুলা জানা থাকায় চা বিক্রিতে নেমে পড়েন।

২০১৮ সালে রাজধানীর বিমানবন্দর রেল স্টেশন এলাকায় ভ্যান গাড়িতে রাজকীয় চায়ের দোকান শুরু করেন দুবাই ফেরত আজাহার উদ্দিন রাজা। নামা দেন বিখ্যাত রাজা চা। কাজু বাদাম, জাফরান ও পেস্তা বাদামসহ নানান দামি সব উপকরণ দিয়ে শুরু হয় বিশেষ এই চায়ের দোকান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে রাজা চায়ের নাম। হুমড়ি খেয়ে পড়ে ভোজনপ্রেমীরা। সেই ভ্যান গাড়ি থেকে শুরু হওয়া রাজা চায়ের আজ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দোকান রয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক জায়গায় দেশের সব ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত খাবারের মেলা বসেছে বনানীর মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক পার্কে। মেলার সব স্টলই খাবারের। মুজিব’স বাংলাদেশ ফুড ফেস্টিভ্যাল ‘টেস্ট অব বাংলাদেশ’ নামে এর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। বৃহস্পতিবার (৪ মে) থেকে শুরু হওয়ায় এ ফুড ফেস্টিভ্যালে স্টল নিয়ে হাজির রাজা চায়ের স্বত্বাধিকারী আজাহার উদ্দিন রাজা।

মেলায় আলাপকালে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘একসময় খুব কষ্ট করেছি। আজ সবার দোয়ায় ও আল্লাহর রহমতে সবকিছু বদলে গেছে। ভ্যান গাড়ি থেকে শুরু করা রাজা চায়ের দোকান রয়েছে ১৮টি। যেখানে ৭২ জন কর্মচারী কাজ করেন। যাদের বেতন ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা।’

‘২০১৩ সালের দিকে দুবাই থেকে দেশে ফিরে আসি। তখন সবাই বলতে থাকে দুবাই থেকে সবাই সোনা-দানা আনে তুমি কী এনেছো? আমি দুবাইয়ের রাজকীয় চা বানানোর কাজ জানতাম, দেশে এসে এটা শুরু করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পুঁজির অভাবে পারিনি। আমার বাসা যেহেতু বিমানবন্দর স্টেশনের পাশে। তাই স্টেশনের পাশে একটি গাড়ি সার্ভিসিংয়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করি। কিন্তু আমার মন পড়ে থাক রাজকীয় চায়ের দোকান করার দিকে। পরে ২০১৮ সালে একটা ঝুঁকি নেই। বিশেষ পাত্র থেকে শুরু করে নানান জিনিস দুবাই থেকে এনে ভ্যান গাড়িতে খুলে বসি রাজা চায়ের দোকান।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমার চায়ের স্বাদ ভিন্ন। কাজু বাদাম, জাফরান ও পেস্তা বাদামসহ দামি দামি উপকরণ দিয়ে বিশেষভাবে চা বানানোয় খুব অল্প সময়ের মধ্যে ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আস্তে আস্তে আমি ব্যবসার প্রসার বাড়াতে থাকি। বর্তমানে রাজা চায়ের দোকান ১৮টি। ঢাকার  মতিঝিল, মিরপুর ছাড়াও কক্সবাজার, চিটাগাং ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে রাজা চায়ের দোকান আছে। আল্লাহর রহমতে এটাই আমার অর্জন। আমার প্রতিটি কাপ চা বিক্রি হয় ৩০ ও ৫০ টাকায়।’

ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানাতে গিয়ে  রাজা বলেন, ‘আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। বর্তমানে আমার বাসা বিমানবন্দর রেল স্টেশন সংলগ্ন মোল্লার টেক এলাকায়। আমি প্রতিদিন রাজা চায়ের বিভিন্ন দোকানে ঘুরি ও খোঁজ-খবর নেই। এছাড়া ফুড ফেস্টিভ্যালসহ জাতীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে যাই।’

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশের সব ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত খাবারের মেলা আয়োজন সম্পর্কে রাজা চায়ের মালিক বলেন, ‘এক জায়গায় দেশের বিখ্যাত সব খাবারের আয়োজন আসলেই অসাধারণ। সাধারণ মানুষের কাছে ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ পৌঁছে দিতে আমরা দোকানিরা এখানে স্টল নিয়েছি।’ 

ফুড ফেস্টিভ্যালে রাজধানীর উত্তরা থেকে ঘুরতে আসা আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু সায়েম বলেন, ‘দেশের ঐতিহ্যবাহী সব খাবারের আয়োজনের খবর পেয়েই বান্ধবীসহ চলে এসেছি। ঘুরে ঘুরে দেখলাম ও কিছু কিছু খাবার খেয়ে দেখলাম। বিখ্যাত রাজা চায়ের কথা অনেক শুনেছি। আজ এই ফুড ফেস্টিভ্যালে রাজা চা পেয়ে খেয়ে দেখলাম, সত্যিই স্বাদটা অসাধারণ।’

বিকেলে ফুড ফেস্টিভ্যালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। এই ফুড ফেস্টিভ্যাল আগামী শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে। যা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে।

এখানে যেমন আছে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মন্ডার স্টল, তেমনি রয়েছে রাজা চা, কুমিল্লা মাতৃভাণ্ডার, হাজি বিরিয়ানি, বিউটি লাচ্ছি, বগুড়ার দই, নাটোরের কাঁচা গোল্লা, টাঙ্গাইলের চমচম থেকে শুরু করে দেশের সব ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত খাবার। একইভাবে পাঁচ তারকা হোটেলের খাবার নিয়ে উপস্থিত রয়েছে হোটেল ওয়েস্টিন, হোটেল শেরাটনের স্টল। এতে অংশ নিয়েছে দেশের বিখ্যাত ৪০টি খাবারের রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যেসব রেস্টুরেন্ট ও খাবারের আইটেম নিয়মিত মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হয় সেগুলো নিয়েই এই আয়োজন। এই ইভেন্টে আছে পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারের বিসমিল্লাহ কাবাব, আল-আমিন বাকরখানি ও রুটি, মোহাম্মদপুরের মুস্তাকিমের চাপ ও বোবার বিরিয়ানি। 

এছাড়া রয়েছে বারকোড ক্যাফে, সিস্টেম রেস্টুরেন্ট, সিলেটের পানসী রেস্টুরেন্ট, তুলশিমালা, মনিপুরি খাবার, কক্সবাজার সি ফুড, চিং’স কিচেন, আদর্শ মাতৃভাণ্ডার, ঘুড্ডি কমিউনিকেশনসের চায়না পিঠা ও নারিকেলের মাংস, জামতলার সাদেক গোল্লা, কুষ্টিয়ার কুলফি মালাই, সাতক্ষীরার সাগর সুইটস, খুলনার আব্বাস হোটেলের খাসির চুই ঝাল, পাবনার সতেজ’র নিমকি পাপড়, নওগাঁর মা প্যারা সন্দেশ, শম্পা দধি, টিওয়াই ফুডের প্যালকা ও ছ্যাঁকা, দিনাজপুরের চাল, চিড়া ও পাপড়, বরিশালের মাটির খাবার ঘর রেস্টুরেন্ট, সন্ধ্যা নদীর ইলিশ, ব্যাসকাঠির হাতে ভাজা মুড়ি, জয় গুরু মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের গুটিয়া সন্দেশ, কাঁঠালবাড়ির কাঁঠালের আনারস ও জামের আঁচার, আলফা অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড অ্যাগ্রোর চিংড়ি, সুন্দরবনের মধু ও জুস ভ্যালির নানান ফলের জুস। 

এএসএস/কেএ